রোববার খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অফিসারস্ কাবে আলোচনা সভায় খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও শেফালিকা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা। কীর্তিকা চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রেস কাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি পুলিশের সদর থানার প্রতিনিধি এসআই বিকিরণ চাকমা, দুর্বার নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি নমিতা চাকমা, দয়ানন্দ ত্রিপুরা, কাবিদাং’র নির্বাহী পরিচালক লালসা চাকমা, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য শাপলা দেবী ত্রিপুরা প্রমুখ।
এসময় আরও উপস্থিত বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ’র প্রতিনিধি নবলেশ্বর দেওয়ান ত্রিপুরা, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কের খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক ও সাংবাদিক চিংমেপ্রু মারমাসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, যুব সংগঠন, ছাত্র ও অভিভাবকরা।
এর আগে জেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আধা ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন চলাকালে খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির গীতিকা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন এ্যাডভোকেট অনুপম চাকমা।
আলোচনা সভায় এসডিজির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী নারীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং নির্যাতন ও তিকর চর্চা থেকে তাদের মুক্ত করতে সব ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জরুরি পদপে গ্রহণ করা দরকার বলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পে কয়েকটি করণীয়সমূহ বাস্তবায়নে উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারীর মতায়নের ল্েয পর্যাপ্ত বিনিয়োগ,জাতি ধর্ম, বণৃ নির্বিশেষে সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা মেয়ে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইনের পরিবর্তন করা, আইনের সঠিক, নিরপে ও সময়ানুগ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলকে মূখ্য বিবেচনা না করে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা এ ধরনের আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় কোনো বৈষম্য, বিলম্ব ছাড়াই তাৎণিকভাবে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যৌতুক আদান-প্রদানকারীকে এবং বাল্যবিবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে বয়কট এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া, আইনের সঠিক, নিরপে ও সময়ানুসারে প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে সরকারের দায়বদ্ধতা তৈরি করা, বিচার বিভাগসংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের সেবাদানকারী সদস্যদের জেন্ডার সংবেদশীল করে গড়ে তুলতে হবে এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা, নারী নির্যাতনকারীকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশয় দেয়া বন্ধ করা, প্রতিটি থানায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করতে হবে, যা নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত করা, যৌন সহিংসতা বন্ধে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিার সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা,ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে তার পাশে দাঁড়ানো এবং তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, চিকিৎসাসহ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করা, সর্বজনীন পারিবারিক আইন চালু করা, উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও বৈষম্য সৃষ্টি করছে এমন সকল দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আচরণ পরিবর্তনে জাতীয পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনসচেতনতা ও জনআন্দোলন সৃষ্টি ও পুরুষদের সম্পৃক্ত করা।
উল্লেখ্য, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৯৯সালে জাতিসংঘ ২৫নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৬০ সালের এই দিনটিতে ডমিনিকান রিপাবলিকে র্যাফাযের তুরজিলোর স্বৈরশাসনের (১৯৩০-১৯৬১) বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী তিন বোনকে একই সাথে হত্যা করা হয়। অবশ্য এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তুরজিলোর স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এই তিন বোনের স্মরণে ও নারীর প্রতি সকর প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিশ্বের আরো কিছু দেশের নারী সংগঠনসমূহ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দানের জন্য তখন থেকেই দাবি জানিয়ে এসেছে। ১৯৮১সালে ২৫নভেম্বর ল্যাটিন আমেরিকার নারীদের সম্মেলনে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এই দিবসটি স্বীকৃতি পায়। তখন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি যথাযথ মর্যাদা সহকারে পালন করা হচ্ছে এবং ১৯৯৭ সাল থেকেই বাংলাদেশে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.