বান্দরবানের চিম্বুকের বুকে ম্রো আদিবাসীদের জায়গা দখল করে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের লিজ বাতিল ও সকল প্রকার পর্যটন স্থাপনা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
বুধবার সন্ত লারমার সমথর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
প্রেস বার্তায় অভিযোগ করা হয়, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা যে সংবাদ সন্মেলন করেছেন তা প্রতারণামূলক, বাস্তব বিবর্জিত ও চুক্তি বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন তা পার্বত্য জেলার আইন অনুযায়ী জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য অঞ্চলে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম ও পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনার বিধান থাকলেও তিনি তা করেননি। যা সম্পূর্ণ চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম।
প্রেস বার্তায় আরো দাবী করা হয়, সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি প্রতারণা করেছেন। কারণ কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপ-আলোচনাক্রমে উক্ত তর্কিত জমিটি পরিষদের দখলে নেয়া হয়েছে। কিন্ত সেই লক্ষ্যে কাজে না লাগিয়ে পরিষদ হীনস্বার্থে ‘পর্যটনের জন্য’ সেনা বাহিনীর নিকট ৪০ বছরের মেয়াদে লীজ দেয়া হয়েছে। জমিটি দখলে নেয়ার পর পার্বত্য জেলা পরিষদ ‘কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার’ উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য ক্ষতিকারক, আদিবাসী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির জন্য ধংসাত্মক, জুম্ম জনগণের প্রথাগত ভূমি অধিকার পরিপন্থী তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তি মোতাবেক প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য লীজ দেয়া নি:সন্দেহে ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতারণার সামিল। ম্রো জনগোষ্ঠী, জুম্ম জনগণ ও দেশের মানবতাবাদী ব্যক্তিবর্গসহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তা কখনোই মেনে নিতে পারে না।
প্রেস বার্তায় আরো দাবী করা হয়, বিনানুমতিতে পাহাড় কর্তন না করা, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কার্যক্রম না করা, স্থানীয় উপজাতীয়দের জীবন-যাপন ও আচার-আচরণের বিঘ্ন করে এমন কার্যক্রম গ্রহণ না করা ইত্যাদি ১৮ শর্তাবলী প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে মর্মে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হোটেল বিল্ডিংয়ের সাথে পর্যটকদের এক পাহাড়থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি পৃথক ভিলা, আধুনিক কেবল গাড়ি, রাইড এবং সুইমিং পুলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক সুবিধা, ছড়া-ঝিড়ি বাঁধ দিয়ে পানি ব্যবস্থা ইত্যাদি স্থাপনা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ব্যাপক পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হবে। কেবল তাই নয়,ম্রো জনগোষ্ঠীসহ আদিবাসী জুম্ম জনগণের উপর নৈতিবাচক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব পড়বে। স্বভাবতই গোটা চিম্বুক ভ্যালীর ম্রো বসতির উপর নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে। পূর্বেকার মতো কাপ্তাই বাধেঁর মতো হাজার হাজার জুম্ম উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে বলে প্রেস বার্তায় আশংকা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা মহোদয় নিজেদের জনস্বার্থ বিরোধ কার্যকলাপ ধামাচাপা দিতে সাফাই গেয়েছেন প্রেস বার্তায় বলা হয়, বান্দরবান জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী বান্দরবানের আদিবাসী তথা স্থায়ী বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও জেলার সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু চুক্তির ২৩ বছর হতে চললেও পার্বত্য জেলা পরিষদ গণতান্ত্রিক না হয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের লুটপাটের একটা আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কোন সময় পার্বত্য জুম্ম জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি। প্রাণ-প্রকৃতি ধবংস করে, ম্রো আদিবাসীদের জীবনকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়ে শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত না করে পর্যটনের নামে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা কখনোই স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর কল্যাণমূলক হতে পারে না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.