রোববার খাগড়াছড়িতে আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সন্মেলনে বক্তারা সরকার আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন নয়, গঠন করছে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ ডেথ জোন। উল্লেখ করে বলেছেন, প্রস্তাব গ্রহণের আগে আলুটিলাবাসীর মতামত নেয়া হয়নি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্মিক ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কেও গবেষণা করা হয়নি। বক্তারা অবিলম্বে আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন গঠনের প্রস্তাব বাতিলসহ সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানান।
আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য রিতা রোয়াজার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জয়ন্ত ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সাগর ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রসেনজিত ত্রিপুরা, আলুটিলা ভূমি রক্ষা ছাত্র জোটের আহ্বায়ক তনয় ত্রিপুরা, পিসিপি চবি শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রূপন চাকমা, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য দোতারা বালা ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি চাইহ্লাউ মারমা। সম্মেলনের আগে রিছাং ঝর্ণার রাস্তার মুখে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্ষন্ত মানববন্ধন করা হয়।
সম্মেলনে আলুটিলাবাসীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবাদী কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমর্থন আদায়ের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো; প্রস্তাবিত পর্যটন জোনের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক গ্রামে ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন এবং আন্দোলন পরিচালনার জন্য ‘আলুটিলা ভূমি রক্ষা তহবিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত পাঠ করেন আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য রিতা রোয়াজা। সেগুলো হল আলুটিলার স্থায়ী বাসিন্দাদের দালিলিকভাবে জমির বন্দোবস্তী প্রদান করা, আলুটিলা এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা করে এমন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে যাতে কাউকে নিজ জমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হতে না হয়, আলুটিলায় ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান সৃজনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিকসহ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা।
সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য আনন্দ চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শান্তিপ্রভা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলাশাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ জেলা শাখার সভাপতি উক্যচিং মারমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক টেতুসা ত্রিপুরা এবং ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের পিছু হটার আর কোন জায়গা নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে জমিতে আমরা যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছি, যে মাটির সাথে আমাদের পূর্বপুরুষরা মিশে রয়েছেন, যে জমিতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলাই, যে জমি আমাদের প্রাণস্বরূপ, সে জমি থেকে উৎখাত হওয়া মানেই আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। তাই প্রতিরোধ করা ছাড়া আমাদের সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই।’
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.