সারা দেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলায় এ বছর সবচেয়ে বেশি স্কুল-মাদ্রাসা ‘মানথলী পে-অর্ডার’ (এমপিও) এর তালিকাভুক্ত হলেও বাদ পড়েছে কাপ্তাইয়ের কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম। এমপিও ভুক্তির তালিকায় অন্তর্ভূক্তির সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরেও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির ভাগ্যে এমপিও ভুক্তি না জুটায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষকগণ।। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য জেএসসির নির্বাচনী পরিক্ষাসহ বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়কে এমপিও ভুক্ত না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে মুঠো ফোনে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মোঃ রফিকুল আলম। শবিবার(২৬ অক্টোবর) সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাত করে তাদের আন্দোলনের বিষয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন ।
কাপ্তাইয়ের কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ রফিকুল আলম আরো বলেন, ২০০২ সালে কেআরসি লোকসানের মুখে পে-অফ হলে বিদ্যালয়টির ভাগ্যে দূর্ভোগ নেমে আসে। তারপর থেকেই অজ্ঞতা ও মুর্খতার হাত থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষার চেষ্টায় এই বিদ্যালয়েই দেড়-দু`হাজার টাকা বেতন নিয়ে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছি। বিগত ২০০৯ সালেও এই বিদ্যালয়কে প্রশাসনিক-রাজনৈতিকসহ সর্বমহল কর্তৃক এমপিও ভুক্তির চূড়ান্ত আশা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত হয়নি কিছুই।
এদিকে, আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি পরিক্ষার্থীদের ২টি নিবার্চনী পরিক্ষা ও শ্রেণীকক্ষে পাঠদান স্থগিত করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। বিদ্যালয়কে এমপিও ভুক্তি করা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর পারছিনা। উল্লেখ্য, এবছর কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১শ` জন ছাত্রছাত্রী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরিক্ষায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৫ শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করছে।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারমান মোঃ মফিজুল হক কেআরসি স্কুলের শিক্ষকগণ তার সাথে দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দীর্ঘ ১৩ টি বছর এবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সামান্য বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছে। তারা এই সামান্য বেতনে অত্যন্ত মানবেতর দিন যাপন করছে। শিক্ষকদের পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবী যৌক্তিক হলেও বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে তাদের এমন আন্দোলন করাটা ঠিক হবেনা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের পরিক্ষার শেষ মুর্হুতে শিক্ষকদের এই আন্দোলনের ডাক দেওয়াকে অযৌক্তিক মনে করেন চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন বিনা-বেতনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, তার জন্য তাদের প্রতি আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। এই বিদ্যালয়ের প্রতি রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদারের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। আমরাও চেষ্টা করেছি বিদ্যালয়টিকে এমপিও ভুক্ত করতে। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো এবিষয় নিয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমূহুর্তে শিক্ষকদের পরীক্ষাসহ ক্লাস বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক হবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.