যুগের পর যুগ খাগড়াছড়ি জেলার ৮৪টি গুচ্ছগ্রামের ২৬ হাজার ২শ ২২ পরিবারের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে আসছে যখন যে দল থাকে ক্ষমতায়। গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগের বাণিজ্য, বিধি লংঘন করে টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং রেশন কার্ডধারীদের মাঝে প্রাপ্য রেশন সুষ্ঠুভাবে বিতরণ না করা যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দারিদ্রতা ও মূর্খতার সুযোগ নিয়ে এসব গুচ্ছগ্রামের জন্ম নিয়েছে চাল গম কেনাবেচার ছোট বড় সিন্ডিকেট। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকারের দলীয় লোকজনই এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকেন। স্ব-স্ব গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যানের সাথে আতাঁত করে এসব সিন্ডিকেট দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে গুচ্ছগ্রামের হাজার হাজার পরিবার। প্রতি ডিওতে চাল পেলে গম পাচ্ছে না, চাল পেলেও তা ওজনে কম, এমনও রেশন কার্ডধারী আছে যে বছরের পর বছর শুধুমাত্র মাষ্টাররোলে স্বাক্ষর দিয়ে আসছেন। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে বইছে অশান্তি ও প্রকল্প চেয়ারম্যানদের শোষন। সুষ্ঠুভাবে রেশন বিতরনে দায়িত্বশীলদের বাদ দিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের নীতিমালা লংঘিত হচ্ছে।
অভিযোগে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পৌরসভাধীন কুমিল্লাটিলা ও শালবন গুচ্ছগ্রামে আবারও সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যান পদে দলীয় লোকদের নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রকল্প চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার অজুহাতে দীর্ঘ ৬মাস যাবত রেশন বিতরণ বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে জেলা সদরের শালবন ও কুমিল্লাটিলা গুচ্ছগ্রামসহ জেলার একাধিক গুচ্ছগ্রামবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, শালবন গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান পদে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসলাম উদ্দিনের আবেদনপত্র খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত রহস্যজনক কারনে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসলাম উদ্দিন অভিযোগে আরো বলেন, গুচ্ছগ্রাম নীতিমালা অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি হিসেবে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার পরও আমার আবেদনপত্রটি রহস্যজনক কারনে অগ্রায়ন করা হচ্ছে না জেলা প্রশাসক বরাবর।
এরিমধ্যে এ ধরনের নিয়ম লংঘনের বিষয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলার ২৪টি গুচ্ছগ্রামের জনপ্রতিনিধিরা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ ইসলামউদ্দিনও বলেছেন, নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে কাউকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হলে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেবেন।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মীর শওকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, শালবন গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে আনোয়ার হোসেনের আবেদনে স্থানীয় সাংসদ সুপারিশ করায় তা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কাউন্সিলর ইসলাম উদ্দিনের আবেদনে স্থানীয় সাংসদের কোন সুপারিশ নাই, আবেদনটি দেখছি কি করা যায় !
এদিকে, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের প্রকল্প চেয়ারম্যান না করা প্রচলিত বিধি লংগন। জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে দলীয় লোকদের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রদান করে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাবাসীদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। তিনি নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি এ জেলায় যোগদানের পর এখনও পর্যন্ত কাউকে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রদান করেননি। খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার ২টি গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ আবেদনকারীদের আবেদন যাচাই বাছায়ের পর সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বিধি অনুযায়ী প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রদান করবেন বলেও জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.