বাংলাদেশের দার্জিলিং বলে খ্যাত পার্বত্য বান্দরবানে শনিবার থেকে তিন দিন বাপী পার্বত্য লোকজ মেলা শুরু হয়েছে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের রানী বান্দরবান এখন পাহাড়ী-বাঙালী উৎসবের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, পার্বত্য বান্দরবানকে আরও ব্যাপক আকারে সাজিয়ে পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্বের কাছে সুপরিচিত করে গড়ে তুলতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল অশান্তির জনপদ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজ সমগ্র পার্বত্য এলাকায় শান্তীর সু-বাতাস বয়ে চলছে। তিনি বলেন,এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্রতা মুগ্ধ করে। সরকার আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তরিক। এই বৈচিত্রময় ঐতিহ্যকে জাতীয় ঐক্যে পরিণত করতে হবে। এখানকার সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পর্যটন শিল্পকে জাতীয় আয়ের উৎসে পরিণত করতে হবে। সকালে নীলাচল পাহাড়ের চূঁড়ায় পার্বত্য লোকজ তিন দিনের লোকজ মেলার মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যসা প্রু,৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী পিএসসি,ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইশরাত জামান, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্ট্যাচার্য্য,বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান মোমিন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহতাব উদ্দীন,সদস্য কাঞ্চনজয় তংচঙ্গ্যা প্রমুখ। পর্যটন মন্ত্রী ফানুস ও বেলুন উড়িয়ে পার্বত্য লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। আমরা বান্দরবানের ১২টি জনগোষ্টির সম্প্রীতির সম্মিলন ঘটিয়ে একটি অসম্প্রদায়িক বান্দরবান হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও, বলেন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বান্দরবানসহ পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বান্দরবানের সম্প্রীতি রক্ষায় তাকে সহযোগীতা করার জন্য সকল সম্প্রদায়ের কাছে আহবান জানান। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রসারন করে চ্যানেল আই। অনুষ্ঠানে পাহাড়ি-বাঙ্গালী যৌথ নৃত্য, গান, ¤্রােদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশির সুর মুগ্ধ করে আগত অতিথিদের। তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি), কক্সবাজার, বিরিশিরি, জৈন্তাপুর ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের ১৪টি সম্প্রদায়ের আদিবাসী শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান পরিবেশন করেন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতেও সরাসরি সম্প্রসারন করে চ্যানেল আই। এ লোকজ মেলা উপভোগ করতে হাজার হাজার দর্শক ভীড় করেন। পুরো রাজার মাঠ কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায় দর্শকের উপস্থিতিতে। মঞ্চে একে একে পরিবেশিত হতে থাকে মারমা, বম, গারো, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, খিয়াং, ¤্রােদের নাচ-গান। এছাড়া বিরিশিরি, জৈন্তাপুর ও মৌলভীবাজার থেকে আগত আদিবাসী শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। আদিবাসীদের তরুণীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় প্রিয়দর্শীনি প্রতিযোগিতা। অপরদিকে মাঠে আদিবাসী ও দেশীয় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে ৩৫টি স্টল বসেছে। পরিধেয় কাপড়, বাঁশ-বেতের তৈরি সামগ্রী, আদিবাসীদের খাবার, ভেষজ ঔষধ, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে স্টলগুলো সাজানো হয়েছে। আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও চ্যানেল আই যৌথ উদ্যোগে কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য লোকজ মেলা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। এই লোকজ মেলা তিন দিন ধরে চলবে। এ মেলার সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, সেনা রিজিয়ন, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.