কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের ব্যাঙছড়ি এলাকায় বেইলি ব্রিজটি ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করা না গেলে তা ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করতে গেলে সড়কের পাশে বনের কয়েকটি গাছ কাটার বন বিভাগের অনুমতি না থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রাধীন রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের (বড়ইছড়ি-কাপ্তাই) অংশের ব্যাঙছড়ি এলাকায় পুরানো ব্রীজটি গত বর্ষা মৌসুমে সময় ভেঙে যায়। এতে ব্রীজটি ভেঙে যাওয়ায় বড়ইছড়ি-কাপ্তাই জল বিদ্যূৎকেন্দ্রের নতুন বাজার ও আসামবস্তি সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সড়ক বিভাগ থেকে যানবাহন সচল রাখার জন্য অস্থায়ীভাবে বিকল্প একটি স্টীল বেইলী ব্রীজ স্থাপণ করে। বর্তমানে সেটি নড়বেড়ে হয়ে ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে। যে কোন মহুর্তে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সড়কে নতুন গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য গত বছর ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সড়ক ও পথ বিভাগ থেকে দরপত্র আহ্বান করে। এতে ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৬৪ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫০ মিটার ধরা হয়েছে। এতে দরপত্র পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইরফানুল করিম। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে গেলে সড়কের পাশে থাকা সংরক্ষিত বনের ১২ থেকে ১৪টি সেগুনসহ কয়েকটি গাছ থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে আপত্তি দেয়। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কাপ্তাই উপজেলার বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিতে আবেদন জানালে তারা সুপারিশ আকারে জেলা কমিটিতে পাঠিয়ে দিলেও জেলা বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির কোন সিদ্ধান্তই দিতে পারেনি। ফলে ব্রীজ নির্মাণের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ব্রীজটি ভেঙে গেলে গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ কেন্দ্র, নৌ বাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জম ঘাটি, সেনাবাহিনীর ঘাটি, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার বাপ্পী তংচংগ্যা জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার পর তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিকসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে কাজ শুরু করতে যায়। তবে বনবিভাগের কয়েকটি গাছ থাকায় আপত্তি জানানোর কারণে কাজ এখনো শুরু করতে পারিনি। এতে তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর কার্যাদেশ বাতিল হলে তার প্রতিষ্ঠানকে পথে বসতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মোঃ আবু সুফিয়ান বলেন, যে স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে সেখানে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনের ভেতরে রয়েছে। ব্রীজটি করা হলে বন বিভাগের গাছ কাটতে হবে। গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া বন বিভাগের এখতিয়ার নেই। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গাছ না কেটে ব্রীজটি স্থাপনার কাজ শুরু করতে পারে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দীন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পর উপজেলার বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি থেকে সুপারিশ করে জেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ব্রীজটি করতে গেলে বন বিভাগের কয়টি গাছ কাটতে হবে তার তালিকাও জেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে ব্রীজটি করতে গেলে গাছ কাটতে হবে নাকি গাছ না কেটে করবে।
চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, গত বর্ষা মৌসুমের সময় পুরাতন ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে অস্থায়ী ষ্টিল ব্রীজ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি যে কোন মহুর্তে ভেঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ ব্রীজটির নিজের অংশের মাটি সরে গেছে। তাই একমাত্র সমাধান হচ্ছে নতুন ব্রীজ স্থাপন করা। তবে ব্রীজ করতে গেলে বন বিভাগের কিছু গাছ কাটতে তার আপত্তি দিয়েছে। এতে ব্রীজের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃহত্তর ও এলাকাবাসীর স্বার্থে বন বিভাগকে পজিটিভ হিসেবে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা থেকে একটি সুপারিশ এসেছে। রোববার এ সংক্রান্ত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
--হিলবিডি২৪/াসআর.