পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মতো সামরিক উপায়ে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের কার্যক্রম জোরদার করেছে। সরকারের সেই হীনতৎপরতারই অংশ হিসেবেই সম্প্রতি ৩০টি এবিপিএন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)।
শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠনো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবধিকার পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনে এই দাবী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবী করা হয়, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে আ্ইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক ২৪টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে ৪৯ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে ২৮টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এবং তাতে ৭৯ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিলেন। এছাড়া মার্চ-মে মাসে সংঘটিত ২৪টি ঘটনায় একজনকে বিচার-বহির্ভুত হত্যা, ২১ জনকে অবৈধভাবে গ্রেফতার, ৭ জনকে নির্যাতনসহ ২৮ জনকে মারধর ও নির্যাতন, ৬টি বাড়ি তল্লাসী ও জিনিসপত্র তছনছসহ ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়াও গত মার্চ-মে মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম সেটেলার কর্তৃক একজন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যাসহ ৪ জন জুম্ম নারীর উপর যৌন সহিংসতা, জুম্মদের ৯টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে লামার তিন গ্রামে জুম্মদের ৩৫০ একরের জুমভূমি, ফলজ বাগান ও গ্রামীণ বনে অগ্নিসংযোগ এবং এতে ৩৯ পরিবারের ২০০ জন নারী-পুরুষ জীবন-জীবিকা, খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটের মুখে পড়া ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে। সংস্কারপন্থী জেএসএস, ইউডিপিএফ (গণতান্ত্রিক), মগপার্টি, বমপার্টি নামে খ্যাত কেএনএফ কর্তৃক ১১ জনকে হত্যা এবং একজনকে মারধরসহ ৪ জনকে অপহরণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ভাগ করো শাসন করো নীতির ভিত্তিতে জুম্মদের মধ্যে সংঘাত চাপিয়ে দেয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করা, সর্বোপরি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিয়ে পার্বত্য পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ কর্তৃক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করে সন্ত্রাসী কাজে লেলিয়ে দেয়ার কার্যক্রমে সর্বশেষ সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে বমপার্টি নামে খ্যাত কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। আইন-শৃংখলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে, সাম্প্রতিক সময়ে আবির্ভাব হতে না হতেই এখন কেএনএফ সেই অপপ্রচার জোরেসোরে চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কেএনএফ জামায়াতে আরাকান নামে একটি সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গী সংগঠনকে রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা এলাকায় তাদের গোপন আস্তানায় আশ্রয় দিয়েছে। বিনিময়ে জামায়াতে আরাকানের পক্ষ থেকে কেএনএফকে অস্ত্র ক্রয়সহ মাসিক অর্থ সাহায্য প্রদান করছে বলেও প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অরো দাবী করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে পদদলিত করে প্রত্যাহৃত সেনাক্যাম্পের জায়গায় একতরফাভাবে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে গত ২৫ মে রাঙামাটিতে উচ্চ পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা সভা এবং ২৬ মে এপিবিএনের আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। ্এতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হানাহানির বিষয়টি ইস্যু করে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করা, সর্বোপরি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিয়ে পার্বত্য পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ কর্তৃক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করে সন্ত্রাসী কাজে লেলিয়ে দেয়ার কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।