আদিবাসীদের স্ব-স্ব মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা নিশ্চিতে, উচ্চ শিক্ষায় পাঁচ শতাংশ কোটা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা বৃত্তি বরাদ্দের দাবীতে শনিবার রাঙামাটিতে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে আয়োজিত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশে প্রধান অতিথি অতিথি ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক জুয়েল চাকমা।
পিসিপি’র জেলা শাখার সহ-সভাপতি রিটন চাকমার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির নেতা টোয়েন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী আশিকা চাকমা, মারমা স্টুডেন্টস ফোরামের রাঙামাটি শাখার সাধারন সম্পাদক সাচিং প্রু মারমা, পিসিপি’র রাঙামাটি কলেজ শাখার সভাপতি সুমিত্র চাকমা, পিসিপি’র রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারন সম্পাদক দীপেন চাকমা, পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মিন্টু চাকমা ও পিসিপি’র শহর শাখার সভাপতি পলাশ চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে রাখেন পিসিপি’র জেলা শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক নিতীশ চাকমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিসিপির জেলা শাথার সাধারন সম্পাদক রিন্টু চাকমা। মানববন্ধনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবী-দাওয়া সম্বলিত প্লেকার্ড ও পেষ্টুন নিয়ে অংশ গ্রহন করেন।
সমাবেশে বক্তারা আদিবাসীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা বৃদ্ধি, আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শিক্ষা প্রসারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন দাবী জানান। একই সাথে বক্তারা পার্বত্য চুক্তি পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া পর্ষন্ত রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিতের দাবী করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিসিপি’র সভাপতি জুয়েল চাকমা বলেন, সরকার পার্বত্য এলাকায় প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষার উপকরন সরবরাহ না করে, পার্বত্য এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক রেখে উন্নয়নের নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে পার্বত্য এলকায় ভূমি দখল করে চলেছে। এছাড়াও পর্যটনের নামে, সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ, বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করে হাজার হাজার একর ভূমি দখল করে চলেছে। যা মূল কাজটি না করে সরকার আদিবাসীদের অস্থিত্বকে বিলুপ্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা বিজ্ঞান ভিত্তিক ও প্রগতিশীল না হওয়ায় আজ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে, জঙ্গিবাদের মদদ দিচ্ছে। শিক্ষাকে বেসরকারি করণ করে শিক্ষা বাণিজ্য করা হচ্ছে। শিক্ষার ব্যয় বেড়ে চলেছে, শিক্ষার্থীর বেতন, পরীক্ষার ফিস, বইপত্র, কাগজ-কলম সহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে চলেছে। যার ফলে গরিব শিক্ষার্থীরা অর্থের অভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে পিসিপি’র জেলা শাখার সহ-সভাপতি রিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় আজ প্রাইমারী স্কুলের বেহাল দশা। তাছাড়া পার্বত্য এলাকা প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানে শিক্ষকরা বর্গা প্রথার মাধ্যমে শিক্ষাদান করছেন। এতে শিশুরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা স্ব-স্ব মাতৃভাষার মাধ্যমে না হওয়ায় শিশুরা দ্বিতীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এতে অনেক শিশু প্রাইমারী থেকে ঝরে যাচ্ছে।
তিনি শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সঠিকভাবে তত্বাবধানসহ সব কিছু নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ইতিহাস সঠিকভাবে পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরার দাবী জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.