• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
সাজেকে ট্রাক উল্টে খাদে নিহত ৯, আহত ৬                    বৃহস্পতিবারের ডাকা অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ রাঙামাটি শহর আওতামুক্ত                    দ্রুত কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি,স্বাভাবিকের চেয়ে আট ফুট পানি কম                    বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ                    কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার ২৮ বছর পর খারিজ                    পার্বত্যাঞ্চল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১২জন ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা                    ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু,সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসব শুরু                    বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু উপলক্ষে রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র‌্যালী                    বান্দরবানে ধরপাকড়,হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ ও আটকদের মুক্তির দাবি তিন সংগঠনের                    বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তা                    রাঙামাটিতে জুম উৎসবের আয়োজন                    বন বিভাগের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সন্মেলন                    বিলাইছড়িতে আগুনে ৬টি বসতঘর পুড়েছে, আহত ১                    পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কর্মসূচি পালন                    রাবিপ্রবি’তে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত                    বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধীতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন                    রাঙামাটিতে নতুন সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা                    রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের দরপত্র প্রকাশ নিয়ে গোপণীয়তার অভিযোগ                    কাপ্তাইয়ে গাছ কাটার অনুমতি না থাকায় ব্রীজ নির্মাণে অশ্চিয়তা                    সুখ-শান্তি কামনায় বালুখালীবাসীর মহাসংঘদান                    বরকলে অজ্ঞাত রোগে ৫ জনের মৃত্যু, ১৪ জন অসুস্থ, এলাকায় আতংক                    
 
ads

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে রাজানগরের ঐতিহাসিক চাকমা রাজ বাড়ী

বিশেষ রিপোর্টার : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 15 Jul 2016   Friday

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজা নগরে অবস্থিত প্রায় দুই শত বছরেরও অধিক ঐতিহাসিক পুরাতন চাকমা রাজবাড়ী সংরক্ষন ও সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

 

বর্তমানে শুধুমাত্র এ চাকমা রাজার রাজ বাড়ীটি ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাড়িঁয়ে রয়েছে। তবে এ চাকমা রাজ বাড়ীটি সংরক্ষন ও সংস্কার করা হলে একদিকে যেমন ঐতিহ্য কৃষ্টি রক্ষা সম্ভব হতো,অন্যদিকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠতো।


চাকমা রাজাদের ইতিহাস সূত্র থেকে জানা যায়,সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগরে চাকমা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে এ রাজ প্রসাদ স্থাপন করেন তৎকালীন চাকমা রাজা জানবক্স খাঁ। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে রাজা জানবক্স খাঁর মৃত্যুর হলে তার পুত্র টব্বর খাঁ রাজা হন। এর মাত্র এক বছর পর তার ভাই জব্বর খাঁ রাজা হন। এর পর ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র ধরম বক্স খাঁ রাজা হন। তিনি ছিলেন খাঁ উপাধিধারী চাকমা রাজাদের মধ্যে শেষ রাজা।

 

ধরম বক্স খাঁ তিন রানীর মধ্যে প্রথম রাণী কালিন্দী দেবী, দ্বিতীয় রানী আটকবির গর্ভে কোন সন্তান জন্ম গ্রহন করেনি। তবে তৃতীয় রানী হারিবি’র গর্ভে মেনকা নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। রাজ কুমারী মেনকা সাথে গোপীনাথ দেওয়ানের সাথে বিয়ে হয়। তাদের গর্ভে হরিশ্চন্দ্র নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

 

১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ধরম বক্স খাঁর মৃত্যু হলে রাণী কালিন্দী দেবী রাজ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৪৪ সালে বৃটিশ সরকার রাণী কালিন্দী দেবীকে রাজার যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। রানী কালিন্দী দেবীর সময়েই ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে পার্বত্য জেলা সৃষ্টি হয়।

 

১৮৭৩ সালে রানী কালিন্দী মৃত্যবরণ করেন। এরপর হরিশ্চন্দ্র রাজা হন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হরিশ্চন্দ্রের মৃত্যু হলে তার পুত্র ভূবন মোহন রায় সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা ভূবণ মোহন রায়ের মৃত্যু হলে তার পুত্র নলিনাক্ষ রায় রাজা হন।

 

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা নলিনাক্ষ রায়ের মৃত্যুর পর তার পুত্র ত্রিদিব রায় রাজা হন। ১৯৭৮ সালে রাজা ত্রিদিব রায়ের পুত্র ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ৫১ তম চাকমা রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন।


সূত্রে আরো জানা যায়, এর আগে কক্সবাজার সীমান্তের বান্দরবানের মাতামহুরির অববাহিকায় আলীকদমে চাকমা রাজ্যে রাজধানী ছিল। তখন এ রাজ্যের পরিধি ছিল পূর্বে লুসাই পাহাড়, উত্তরে ফেন এবং দক্ষিণে শংখ নদী।

 

তখনকার রাজা শেরমুস্ত খাঁর ছেলে শুকদেব ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে খাজনা দেয়ার স্বীকৃতিতে নবাব সরকার থেকে কোদালা জঙ্গল বন্দোবস্তি নিয়েছিলেন। ১৭৫৫ সালে শের জব্বর খাঁর পুত্র নুরুল্ল খাঁ কোদালা গ্রামের শুকদেবের পক্ষ হয়ে শাসনভার প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ১৭৫৮ সালে রাজা শেরমুস্ত খাঁ মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র শুকদেব রায় রাজা হন।

 

১৭৭৬ সালে রাজা শুকদেব রায় মৃত্যুর পর তার পুত্র শের দৌলত খাঁ রাজ্যভার গ্রহন করেন। এরপর রাজা শুকদেবের মৃত্যু হলে ১৭৮২ খ্রীষ্টাব্দে জানবক্স খাঁ ১৭ বছর রাজত্ব করেন। তিনিই পরবর্তীতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় রাজা নগরে চাকমা রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তর করেন।


উল্লেখ্য, নবাব সুজা উদ্দীন খাঁ চাকমা রাজাকে খুশি করার জন্য খাঁ উপাধি দিয়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে। এর পর থেকে চাকমা রাজারা খাঁ উপাধী লিখতেন। তবে রানী কালিন্দী দেবীর রাজ্য শাসনের সময় খাঁ উপাধি বাদ দিয়ে রায় উপাধি ব্যবহার করেন।

 

সূত্র মতে, পরবর্তী সময়ে রাঙ্গুনিয়ায় রাজা নগর থেকে রাঙামাটিতে চাকমা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে স্থাপণ এবং পর ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাধের কারণে রাজ প্রসাদ পানিতে ডুবে যাওয়ার পর বর্তমানে রাঙামাটি শহরের রাজদ্বীপ এলাকায় নতুন করে রাজ প্রসাদ নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর বর্তমান চাকমা রাজ প্রসাদটিও অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয়ে যায়। তাই এখন রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর এলাকায় অবস্থিত চাকমা রাজ বাড়ীটি ইতিহাস-ঐতিহ্যর নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হিসেবে রয়েছে।


সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর এলাকার ১২ দশমিক ২০ শতক জমিতে রয়েছে ঐতিহাসিক চাকমা রাজ প্রাসাদ, বিখ্যাত সাগর দীঘি,পৌরাণিক দালান কৌটা, পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ইত্যাদি। বর্তমানে দো-তলা বিশিষ্ট এ চাকমা রাজ প্রাসাদের দেয়াল ধ্বসে পড়ে যচ্ছে।

 

প্রাসাদের চারদিকে লতা-গুল্মে আচ্ছাদিত। আবার একটু দুরে রয়েছে রাণী কালিন্দী রানীর প্রতিষ্ঠা করা অতি প্রাচীন শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার। এছাড়া রয়েছে রাজা ভূবন উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

রয়েছে তৎকালীন রাজার খনন করা সাগর দীঘি। যা দীঘিটি চোখের পড়ার মত। কিন্তু এসব প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তি ও নিদর্শন প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সেগুলো এখন ইতিহাসের পাতা থেকে ঠাঁই নেয়ার পথে।


এলাকার লোকজনদের সাথে বলে জানা গেছে, চাকমা রাজার রাজ প্রাসাদটি তাদের এলাকায় একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা এ রাজ বাড়ীটি সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন।


পুরাতন চাকমা রাজ বাড়ী দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা রুমেল দেওয়ান জানান, দুই শত বছরের অতি প্রাচীন চাকমা রাজবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। যদি সংস্কার করা হয় তাহলে এখানে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটবে। এখানে পুরাতন চাকমা রাজার রাজ প্রাসাদ, সাগর দীঘি, পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির, খেসারী ঘরসহ ইত্যাদি পুরাতন স্থাপত্য রয়েছে।


শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ইজাচারা মহাস্থবির জানান,চাকমা রাজার রাজ প্রাসাদ, অতি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরসহ যে সমস্ত ঐতিহ্যহাসিক স্থাপনা রয়েছে সেগুলো এখন জড়াজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় সংস্কারের জন্য সরকার, দাতাসহ অন্যান্য সংস্থাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


এ ব্যাপারে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন,এ পুরাতন চাকমা রাজ বাড়িটি দু’শ বছরেরও অধিক পুরাতন। তার পূর্ব পুরুষ রাজা জানবক্স খাঁ’র সময়ে এ রাজ প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। যিনি বৃটিশ ইষ্ট কোম্পানীর সাথে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। বর্তমানে এ চাকমা রাজ বাড়ীটি তার পরিবারের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।

 

তবে রাজ বাড়ীটি অর্থের অভাবে এবং সরকারী পৃষ্ঠাপোষকতার অভাবে আমরা সংরক্ষার ও পুনঃ সংস্কার বা সত্বাকে অটুট রেখে মেরামত বা সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু কাপ্তাই বাধে পুরাতন রাজবাড়ী ডুবে যাওয়া তার পরে নতুন রাজবাড়ীও পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ কারণে চাকমা সার্কেলের যে ক্ষতি হয়েছে তা পেরে উঠতে পারছি না।


তিনি আরো বলেন, এ পুরাতন চাকমা রাজ বাড়ীটি সরকারের তত্বাবধানে ব্যবস্থাপনায় করা হোক তা আমার পরিবার চাই না। কারণ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং অনেক স্থানে এরকম পুরাকীর্তি বা রাজবাড়ী যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না।

 

তবে চাকমা সার্কেল থেকে অবশ্যই এ রাজ বাড়ীটি সংরক্ষন করা হবে। এ জন্য তিনি সরকার ও জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাদের কাছ থেকে সহায়তা কামনা করেছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

সংশ্লিষ্ট খবর:
ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ