পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেছেন, অনেক আশা আকাংখা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির দীর্ঘ ২১ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে আশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ব্যাহত করতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নকে ব্যাহত করতে পাহাড়ে আবারও রক্তের হোলি খেলা শুরু হয়েছে।
তিনি এসব ষড়যন্ত্রের নৎসাতকারীদের প্রতিহত করতে ছাত্র সমাজ থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রোববার রাঙামাটিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ২৩ তম সন্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি জুয়েল চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দীন মাহিম,সন্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদীপ্ত বসু, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ফারুখ আহমেদ রুবেল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীলময় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফোরেশনের সভাপতি মনিরা ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্যে দেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক রামভাই পাংখোয়া। সমাবেশে তিন পার্বত্য জেলা থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন।
এর আগে জাতীয় সংগীত ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ২৩ তম সন্মেলনের উদ্বোধন করেন উষাতন তালুকদার এমপি।
এদিকে, বিকালে রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট মিলনায়তনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কাউন্সিলে আগামী এক বছরের জন্য পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পূনরায় সভাপতি হিসেবে জুয়েল চাকমা নির্বাচিত হন। এছাড়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে রামভাই পাংখোয়া ও প্রনুমং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার আরো বলেন, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৬ জন নিহতের ঘটনায় তার দল যুক্ত নয়। এটা খুবই দুঃখজনক ও দু:ভাগ্যজনক, তার জন্য তীব্র নিন্দা জানায়।
তিনি বলেন, আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে বার বার বলে আসছি সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, চাদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান হোক। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হোক আমরা চাই, এসবের বিরোধিতা করছি না। সরকার সন্ত্রাসী,চাদাবাজদের ধরবে আমরাও চাই। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌথ অভিযান হবে নাকি না অন্য কোন অভিযান হবে তা জনপ্রতিনিধিদের অজান্তে করা হয়। অভিযান করা হচ্ছে অথচ একজন নির্বাচিত হয়েও জানি না, পত্রপত্রিকায় দেখেছি, যা দুঃখজনক। একজন জন প্রতিনিধির মানুষের ভাল মন্দ দেখার অধিকার রয়েছে। শুধু তাই নয় তিন পার্বত্য জেলার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকেও অবহিত করা হয়নি।
তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও চাদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান হোক আমরা অবশ্যই চাই, কিন্তু অভিযান নামে সাধারন মানুষ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি যাতে এ অভিযানে সাধারন মানুষকে আতংকিত হতে না হয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবাইয়ের গর্ব। বাংলাদেশে প্রথম একমাত্র স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছে। শেখ হাসিনার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে স্বদিচ্ছা থাকলেও পাহাড়ের কিছু ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার কারনে তা হচ্ছে না। তবে আমরা জানি পার্বত্য চুক্তি আওয়ামীলীগ সরকার সচেতন হলেই চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব ।
কারোর দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে ও কারোর দ্বারা ব্যবহার না হওয়ার পরমার্শ দিয়ে তিনি বলেন, আজকে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে দাদা দলের মানুষদের ব্যবহার করছেন, প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তা সবাইকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নিজের উদ্দেশ্য ও ব্যক্তি স্বার্থে যদি না হয়,একেবারে দলের অনুগত হয়ে থাকনে তাহলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে কি করেছেন, দুটা নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন একটা দলের আর একটা স্বতন্ত্র। নির্বাচন আইনের বিরোধাত্নক। তাই দুই নৌকাতে পা রাখে কে? সুবিধা লোকেরাই দুই নৌকায় পা দেয়।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ রাস্তা বন্ধ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে সমাবেশ করে। দীপংকর তালুকদার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। তারপরেও তার নাগরিক সমাজের ব্যানারে তাকে সমাবেশ করতে হয়। তা তিনি নাগরিক সমাজে ব্যানারে না করে দলীয় ব্যানারে করতে পারতেন, কারণ সেই সমাবেশে কোন নাগরিক ছিল না, দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আপনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন? আমাদের দুটি চোখ ও মানুষের লক্ষ লক্ষ চোখকে ফাকি দিতে পারবেন না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কাদের সিদ্দিকির সাথে গিয়েছিলেন তা ঠিক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? লোকে জানে কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা নয়। যারা মুক্তিযোদ্ধা না তারা নিজেকে বেশি বেশি করে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন। আজকে আমাদের দুঃভাগ্য যে যারা সত্যিকারে মুক্তিযোদ্ধা তাদের তালিকা নেই।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, তিনি একজন নির্ববাচিত এমপি হয়েও জনগনের জন্য কিছুই করতে পারেননি বলে অনেকে বলে থাকেন। তাই আমি এক টুকরো ইটও ফেলতে পারিনি। জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি কাপ্তাই,রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নয়নের জন্য লেখাখেলি ও যোগাযোগ করেছি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে। এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর উন্নয়নের কাজও হয়েছে। অথচ একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে তা উদ্ধোধন করা কথা থাকলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাড়াহুড়ো করে জনপ্রতিনিধি নন এমন লোককে দিয়ে উদ্ধোধন করেছেন। এখানে ফলক উন্মোচনে সরকারি বিধিমালা রয়েছে। কারা ফলক উন্মোচন করতে পারবেন, কারা পারবেন না। কিন্তু তার খায়েস বিভিন্ন কাজের ফলন উন্মোচন করবেন। তবে তা আমরা করি না, আমরা নিজেদের প্রচার করতে চাই না।
উষাতন তালুকদার এমপি পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কোটার আশা না না থেকে নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ছাত্র সমাজে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা করে সবাইকে শিক্ষার দিক দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি নিজেদের অধিকারের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। কেননা অধিকার কেউ সহজে দিতে চাই না। নিজের অধিকার নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.