নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ততই জমে উঠছে। প্রচার প্রচারণায় প্রার্থীরা কেউই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ছাড় দিতে রাজী নয়।
দিনরাত ভোট ভিক্ষায় প্রার্থীরা ভোটারের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চেষ্টা চালাচ্ছেন ভোটারের মন জয় করতে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শানে আলম, বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন জেলা আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড্ আব্দুল মালেক, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন মো. ইসহাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র রফিকুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কিরন মারমা।
নির্বাচন নিয়ে চায়ের দোকান থেকে অফিস আদালত পর্যন্ত সর্বত্রই আলোচনা পর্যালোচনা কে হচ্ছেন আগামীতে খাগড়াছড়ির পৌর মেয়র। কোন প্রার্থী বিজয়ী হবে তা জোড় দিয়ে কেউই বলতে না পারলেও আলোচকদের অধিকাংশের মত নির্বাচন হবে ত্রিমুখী। আবার অনেকের মত চর্তুরমুখী।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেখা গেছে, প্রচার প্রচারণায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী শানে আলম, বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মালেক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম বেশ এগিয়ে আছেন। তবে স্বতন্ত্রপ্রার্থী কিরণ মারমা প্রচার চালাচ্ছেন অনেকটা ভিন্নভাবে। তিনি ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ৩৩ হাজার ৬১৯ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ১২২ জন, মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৪৯৭ জন। আবার পাহাড়ি বাঙালি হিসেবে পৌরসভায় ২১ হাজার বাঙালি ভোটার ও ১২ হাজারের কিছু বেশী পাহাড়ি ভোটার রয়েছে।
বড় দুই দলের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও উভয় দলের প্রার্থীরা স্বস্তিতে নেই। দলের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম উভয় দলের জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, রফিকুল আলম জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম ও জেলা যুব বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলমের আপন ভাই। এ দুই জনই জেলা আওয়ামীলীগে প্রভাবশালী নেতা। নির্বাচনের তাঁরা আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে কোন প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তাঁদের অনুসারী আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠন সমূহের অনেক নেতা-কর্মী দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামীলীগের এই সমস্যা, দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হতে আসতে যথেষ্ট ভোগাবে।
অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থীরও সমস্যা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া তার পছন্দ অনুযায়ী আব্দুল মালেককে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। আব্দুল মালেককে দলের অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ আব্দুল মালেক ভূঁইফোড় নেতা। তিনি উড়ে এসে বিএনপির ঘাড়ে বসেছেন। এ কারণে অনেক নেতা-কর্মী ক্ষোভে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলমের পক্ষে কাজ করছেন ও অনেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী রফিকুল আলম আপাতভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও ভোটের আগ পর্যন্ত তাঁর ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। ভোটের হাওয়া যে কোন মুহুর্তে পরিবর্তন হতে পারে। তখন তিনি বেকায়দায় পড়ার সম্ভবানা রয়েছে।
পাহাড়ের যে কোন ভোটের সমীকরণে পাহাড়ি-বাঙালি হিসেব নিকেশ রয়েছে। অনেক সময় এই হিসেব দেশের বৃহৎ দলগুলোর ভূমিকাও গৌন করে ফেলে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় এক তৃতীয়াংশ ভোটার পাহাড়ি। আর মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বাঙালি চারজন ও একজন পাহাড়ি। চারজন বাঙালির মধ্যে তিনজনই সমানভাবে শক্তিশালী। এই হিসেব নিয়ে কিরন মারমাও নির্বাচনের ভালো ফলাফল করতে পারবেন বলে আশা করছেন। অন্যান্য প্রার্থীর মতো প্রচার প্রচারণা না চালালেও তিনি ভোটারদের দাঁড়ে দাঁড়ে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ও ভোট প্রার্থনা করছেন।
পৌরসভার নির্বাচনে কে বিজয়ী হতে চলেছেন তা কেউ নিশ্চিত নন। তবে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খাগড়াছড়ি সফর করলে অথবা বিএনপির জেলা সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া খাগড়াছড়িতে এসে প্রচার চালালে যে কোন মুহুর্তে নির্বাচনী হওয়া পাল্টাতে পারে বলে অধিকাংশের মত।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.