সরকারকে ভূল চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে পার্বত্য সমস্যাকে যথাযথভাবে চিহিৃত করে দ্রুত সমাধানের লক্ষে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, জাতিসংঘে গিয়ে আপনাদের লোক বলছেন পার্বত্য চুক্তির ৬৫ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু কোথায় চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে তা কাগজে কলমে ও উদাহরণ দিয়ে কি দেখিয়ে দিতে পারবেন? দয়া করে আপনারা চুক্তি নিয়ে এভাবে আর মিথ্যাচার করবেন না। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এখন অনেক অনেক সচেতন হয়েছে।
শুক্রবার রাঙামাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এম এন লারমার ৪০তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উষাতন তালুকদার আরো বলেন, এখনো সময় আসে বড় জাতি সুলভ,জাত্যাভিমান অহংকার না করে পার্বত্য সমস্যাকে বুঝুন। আপনারা ভুল ব্যাখা দেবেন না, আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই, আমরা স্বাধীনতা চাই না, আমরা পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন চাইছি। তাই চুক্তি নিয়ে আর মিথ্যাচার করবেন না। জুম্মরা পশ্চাদপদ, শক্তিহীন হতে পারে কিন্তু ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করলে আমাদের ন্যায্য আন্দোলন অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব। জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়ন চায় না বিষয়টি সঠিক নয়, জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়ন চায়। আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, এর বেশি কিছু চায় না। তিনি পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে,নিজেদের আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার,ভূমি অধিকারের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভবে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত শোক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সভাপতি ডা. গঙ্গামানিক চাকমার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান,সংস্কৃতি কর্মী শিশির চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক নেতা জুয়েল চাকমার সঞ্চালনায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা। সভা শুরুর আগে সংগঠনের নিহেতদের উদ্দেশ্য দুমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে একটি শোক র্যালী জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বর থেকে শুরু হয়ে বনরুপা পর্ষন্ত গিয়ে পুনরায় শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়ন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ বেদীতে এমএন লারমার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকাসহ একটি সুন্দর সমাজ গঠনের আন্দোলন প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ আদর্শবান ও মানবিক গুনের অধিকারী মানুষ। বিশ্বের নিপীড়িত ও অধিকারহারা মানুষের অধিকার-স্বাধিকার নিয়ে সবসময় তিনি সোচ্ছার ছিলেন। শুধু তাই নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার হারা জুম্ম জনগনের আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। এমএন লারমা সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে আরো সোচ্চার হতে হবে। বক্তারা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সই হলেও দীর্ঘ ২৬ বছরেও চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হয়নি দাবী করে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন তাই পার্বত্য মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে গতিশীল করার, যাতে চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিশির চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই আদিকাল থেকে হতে জুম্মরা তাদের নিয়তি ও ভাগ্যকে স্বীকার করে আসছিল। কিন্তু ষাট দশকের পর হতে লারমা অনুভব করেছিলেন জুম্মদের ভাগ্য ও নিয়তি আমাদেরকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত ১৪ টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে একটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির গভীর জঙ্গলের এক গোপন আস্তানায় জনসংহতি সমিতির বিভেদপন্থী গ্রæপের সশস্ত্র হামলায় এমএন লারমা তার ৮জন সহযোদ্ধাসহ নির্মমভাবে নিহত হন। এমএন লারমার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে নতুন উদ্যোমে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরে উপনীত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.