সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে মৌলিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন নামে শুক্রবার রাঙামাটিতে নতুন একটি সংগঠনের আত্ন প্রকাশ ঘটেছে। রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির এ সংগঠনের আত্নপ্রকাশের ঘোষনা করা হয়।
সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের জেলা শাখার আহ্বায়ক অমর কুমার দে। এ সময় নতুন কমিটির সদস্য সচিব স্বপন কুমার দে, সূজিত ভট্টাচার্য্য, সুজন কুমার দে, কাজল কান্তি দে, রাজিব দাশ, টিপুলো দেবনাথ, রাজিব দাশ সুবল, বিত্ত রায় চৌধুরী, বিজয় দাশসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সন্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা না থাকায় গেল দশ বছরে ৫৯ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ একর হিন্দুদের জমিজমা বেদখল হয়েছে। মামলা বা ভোগ দখল করার সাহস পাচ্ছে না তারা। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও নির্যাতন বৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। নানান রকম অত্যাচার নির্যাতনে দিনকে দিন মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে হিন্দুদের। যা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ। সনাতন হিন্দুদের মধ্যে এখনো বর্ণবাদ, হিংসা এবং মতানৈক্য রয়েছে। নিজেদের ঐক্য না থাকায় দৃস্কৃতকারী বিধর্মীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন শিকার। হিন্দু মা বোনেরা ধর্ষন,খুন, অপহরণ এবং শ্লীলতাহানি শিকার হচ্ছেন অহরহ। আগুন দিয়ে টুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্দির, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঘরবাড়ি। দখল, লুটপাট ভাংচুর করা হচ্ছে ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠান। আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে হচ্ছে বিপর্যস্ত। নিরুপায় হয়ে উঠেছে ধর্ম পালনে। মৌলিক মানবিক অধিকার রক্ষায় সনাতন হিন্দুদের প্রতিবাদ করারও সাহস হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য, সংহতি ও অধিকারের লক্ষে এই বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন কাজ করে যাবে।
সংবাদ সন্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, সারাদেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলায়ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। কিন্তু সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকারের কথা বলা হয়নি। তবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের হিন্দু সম্প্রদায় থেকে একজন সদস্য রাখা হলেও তিনি ৮০ বছরে বয়োবৃদ্ধ, তিনি নামে থাকলেও কোন কাজে আসছেন না।
সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, হিন্দু ফেডারেশনের মূল এবং প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সনাতন হিন্দুদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে মৌলিক ঐক্য গড়ে তোলা। সনাতন হিন্দু ধর্মের মানুষের আত্মরক্ষা, নির্বিঘ্নে ধর্ম প্রতিপালন এবং মানবাধিকার রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জনকল্যানমূলক কাজ করা। সনাতন হিন্দুদের যে কোনো বিপদকালীন পরিস্থিতিতে আইনগত সহায়তা প্রদানে সচেষ্ট থাকা। নিরীক্ষা, পরিসংখ্যান এবং গবেষণার মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া। হিন্দুদের ব্যক্তিগত ও দেবত্তোর সম্পদ ও সম্পত্তি সুরক্ষায় আইনগত সহায়তা প্রদান। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা ফলপ্রসু করতে পদক্ষেপ গ্রহণ ।
হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব পালন কিংবা যে কোনো প্রকারের বিপদ ও দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সহযোগিতামূলক কাজ করা। কমপক্ষে ৪৪ টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের । সনাতন হিন্দুদের সার্বিক কল্যাণে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন আগামী দিনে একটি টেকসই, যুগোপযোগী, গবেষণাধর্মী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা করা সংবাদ সন্মেলনে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.