বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে গঠিত সংসদীয় তদন্ত টিমের তদন্ত প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রকাশ,প্রতিবাদকারী সংশ্লিষ্ট পাড়াবাসীদের হয়রানি বন্ধ ও ম্রো জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত এলাকায় “ম্যারিয়ট হোটেল ও বিনোদন পার্ক” প্রকল্প^ বাতিলের দাবী জানিয়েছেন পাড়াবাসীরা।
সোমবার চিম্বুক ও নাইতং পাড়াবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবী জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বান্দরবানের চিম্বুক ও নাইতং পাহাড়ে ম্রো জনগোষ্ঠীদের শত বছরের বসবাসকৃত জায়গাতে বিতর্কিত সিকদার গ্রুপ ও তার অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ম্যারিয়ট হোটেল এন্ড রিসোর্টস নামে একটি পাঁচতারকা হোটলে নির্মানের উদ্যোগ নেয়। এতে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ম্রো জনগোষ্ঠীরা তাদের শত বছরের বংশানুক্রমিক জীবিকার ক্ষেত্র থেকে উচ্ছেদের বাস্তব আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, চিম্বুক পাহাড়ের ২৫টি পাড়ার পাড়াবাসীরা মিলে সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ, বান্দরবান এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে মানব বন্ধন, ১৫শ গ্রামবাসী চিম্বুক পাহাড় থেকে ২২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে “লং মার্চ” করে বান্দরবান সদরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এছাড়া গত ২ মার্চ এর প্রতিবাদে ঢাকায় বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এই দাবির ন্যায্যতার প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের ৬২ জন বরেণ্য নাগরিকরা একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এসব দাবীর প্রেক্ষিতে রাঙামাটির সাংসদ দীপঙ্কর তালুকদারের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সাব-কমিটি-১-এর একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। গত ২০ ও ২১ মার্চ, এই কমিটি নাইতং পাহাড়ে ও বান্দরবান জেলা পরিষদ কার্যালয়ে চিম্বুক পাহাড়বাসীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদ্যমান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি। তবে হোটেলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গত ২ জুন আইন-শৃংখলা বাহিনীর একটি দল ম্রোদের গ্রামে গিয়ে তল্লাসি, গ্রামবাসীদের হয়রানি করা হয় বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রে ম্রো জনগোষ্ঠীদের হতাশা, বঞ্চনা, বেদনা ও কান্নার কথা শোনার কেউ নেই বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে আরো বলা হয়, চিম্বুক পাহাড়ের ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবনেরও কোন মূল্য নেই। গুরুত্ব পাচ্ছে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্কের নামে অর্থকরী ব্যবসা। এতে এই জনগোষ্ঠীদের কোন লাভ নেই, রয়েছে জীবন, জীবিকা ও পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি হারাবার। এই বিলাসবহুল হোটল স্থাপন স্পষ্টতই কোন রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে নয়, বরঞ্চ একটি ব্যবসায়িক গ্রæপের মুনাফা অর্জনের জন্যই এই আয়োজন।
বিবৃতিতে দাবী করা হয়, পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় আমাদের চাষের পাহাড়ি জমির একটা বিশাল অংশসহ ফলজ বাগান, পবিত্র জায়গা, শশ্মানঘাট নিশ্চিতভাবে বেদখল হয়ে যাওয়া, পানির উৎসগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, সংরক্ষিত পাড়াবন ও জীব বৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন উন্নয়ন এবং পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের কারণে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে আমাদের নিজ ভূমিতেই পরবাসী হয়েছেন। এভাবে তাদেরকে আর কতবার উচ্ছেদ হতে হবে? তারা আর উচ্ছেদ হতে চাই না, জমিও হারাতে চান না।
বিবৃতিতে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের ইস্যুকে কেন্দ্র করে তদন্তের উদ্দেশ্যে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে তিন দফা দাবী জানো হয়েছে। সেগুলো হল গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রকাশ করা, পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী সংশ্লিষ্ট পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করা,চিম্বুক পাহাড়ে জীবন-জীবিকা, সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদে প্রথাগত অভিগম্যতা, এবং ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় “ম্যারিয়ট হোটেল ও বিনোদন পার্ক” প্রকল্পটি অবিলম্বে বাতিল করা।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।