একটি সেতুই বদলে দিতে পারে রাঙামাটির দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলাবাসীর ভাগ্য উন্নয়ন। সেটি হল সামিরা-ঘিলাতলির এলাকার ছলক নদীর উপর সংযোগ সেতু। উপজেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের সেতুটি নির্মিত হলে একদিকে চার ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হবে। অপরদিকে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই উপজেলা সদরে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি রাঙামাটির জেলার মধ্যে অন্যতম দুর্গম উপজেলা জুরাছড়িতে সরেজমিনে এলাকার নেতৃত্ব স্থানীয় এবং এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলার চার ইউনিয়ন জুরাছড়ি সদর, মৈদং, দুমদুম্যা ও বনযোগীছড়ার এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিন ধরে সামিরা-ঘিলাতলির ছলক নদীর(শুভলং ছড়া) উপর একটি সেতু নির্মানের জন্য দাবি করে আসছেন। কিন্তু কোন সরকারই এলাকাবাসীর এই দাবী পুরণ করেনি। ফলে এই চার ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের স্বপ্নের সামিরা-ঘিলাতলি সেতুটি স্বপ্ন হিসেবেই রয়েছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে চার ইউনিয়নের সড়ক পথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন ছাড়াও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই উপজেলা সদরসহ রাঙামাটিতে বিক্রি করা যাবে। এতে স্থানীয় লোকজন অর্থনৈতিভাবে লাভ হওয়া ছাড়াও এলাকার প্রচুর পরিবর্তন ঘটবে। কিন্ত সেতুটি স্থাপিত না হওয়াতে এলাকার উন্নয়নসহ সব কিছুই থমকে রয়েছে।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, জুরাছড়ি সদর উপজেলা থেকে মাত্র ৫থেকে ৬ কিলোমিটার দুরত্ব হচ্ছে এই সামিরা-ঘিলতলি সেতৃুর সংযোগ স্থানটি। জুরাছড়ি উপজেলা সদর থেকে সামিরা এলাকা পর্যন্ত গাড়ী চলাচল করতে পারলেও ছলক নদীর ওপর সেতু নির্মিত না হওয়াতে সরাসরি মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের যাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের ছলক নদীর পানি বেড়ে গেলে এলাকার লোকজনের নৌকায় পাড়াপাড়ের জন্য ঝুকিঁপুর্ন হয়ে উঠে। বিশেষ করে সামিরা-ঘিলাতলি এলাকায় একটি মাত্র সরকারী প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নৌকায় পাড়াপাড়ের অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সামিরা মুখ এলাকার মুরুব্বী স্নেহ চাকমা জানান সামিরা-ঘিলাতলির সংযোগ সেতৃুটি না হওয়াতে চার ইউনিয়নের লোকজন খুব অসুবিধা রয়েছি। বিশেষ করে বর্ষাকালে ছলক নদীর পানি বেড়ে গেলে স্কুলের কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের এবং দুমদুম্যা ও মৈদং ইউনিয়নের লোকজনদের পাড়াপাড়ের ভীষন অসুবিধা হয়। এই সেতুটি নির্মিত হলে উপজেলার চার ইউনিয়নের সংযোগসহ ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে।
জুরাছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা জানান, সামিরা-ঘিলাতলি সেতুটি নির্মিত হলে উপজেলা সদরের সাথে বাকী তিন ইউনিয়ন মৈদং, দুমদুম্যা ও বনযোগী ছড়ার সাথে সড়ক পথে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। পাশপাশি এলাকার লোকজনের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ এলাকার পরিবর্তন ঘটবে। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই সেতু নির্মানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবর্তক চাকমা জানান, উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি ও স্বপ্নের দাবি হচ্ছে সামিরা-ঘিলাতলি সংযোগের ছলক নদীর ওপর একটি মাত্র সেতু নির্মাণ করা। যেটি একশ দশ থেকে একশ বিশ মিটার লম্বায় এই সেতু নির্মিত হলে চার ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে। পাশাপাশি কৃষকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আদা-হলুদ, কচু কলাসহ ইত্যাদি উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে উপজেলা সদরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে নায্য মূল্য পাবে। তাছাড়া এই সেতুর মাধ্যমে চার ইউনিয়নের মধ্যে সরাসারি সড়ক পথে সংযোগ স্থাপিত হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত দু বছর ধরে এই সেতু নির্মানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশীলর কাছেও আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পায়নি। তাই জুরাছড়িবাসীর কাছে বর্তমান সরকারের কাছে একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে অবিলম্বের এই স্বপ্নের সেতুটি নির্মাণ করা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর