বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের সাজু আক্তার হত্যার ঘটনার বিচারের দাবী এবং বাদী ও স্বাক্ষীকে প্রধান আসামী কর্তৃক হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে সাংবাদ সম্মেলন করেছে নিহত সাজু আক্তারের পরিবার।
গেল ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের সাজু আক্তার হত্যা মামলার আসামী জয়নাল আবেদীন ভেট্টু ও ভাই আরফাতুল ইসলাম এবং তাদের পিতা আব্দুল জাব্বার সহ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা মামলার বাদী এবং স্বাক্ষীদের নির্যাতন, হয়রানী ও হুমকি দওয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে পরিবারটি।
শনিবার বেলা ১১টায় লামা রিপোর্টার্স ক্লাব হলরুমে এই সাংবাদ সম্মেলন করে।
সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নিহত সাজু আক্তারের বড় ভাই ও উক্ত খুনের মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় সাজু আক্তারের বৃদ্ধ মা আসমা খাতুন (৮৫) ভাই মো. আবুল কাসেম উপস্থিত ছিলেন। খুনের শিকার সাজু আক্তার (২৫) লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের পহর চাঁদা গ্রামের মৃত গোলাম ছোবহানের মেয়ে।
লিখিত বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজ আমরা বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের ও আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গেল ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে সরই ইউনিয়নে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ ভেট্টুর তরমুজ খেতে আমার ছোট বোন সাজু আক্তার (২৫) কে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। খুনি চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান সিকদার পাড়ার আব্দুল জব্বার এর ছেলে জয়নাল আবেদীন ভেট্টু। ভেট্টু তার প্রতিপক্ষ লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য নিজ হাতে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করেন। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহ অন্যান্য স্বাক্ষীদের স্বাক্ষীর ভিত্তিতে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। মামলাটি বর্তমানে স্বাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। যার মামলা নং- দায়রা ৮১/১০, জি.আর- ৮৭/০৮।
বর্তমানে যখন এই হত্যা মামলাটি স্বাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে ঠিক সেই মুহুর্তে অত্র মামলার আসামী জয়নাল আবেদীন ভেট্টু বাঁচার জন্য তার ভাই আরফাতুল ইসলাম, তার পিতা আব্দুল জব্বার সহ পরিবারের সদস্যগণ নামামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমাকে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে একাধিকবার আক্রমণ করা হয়েছে। এদিকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। খুনি ও তার পরিবারের লোকজন আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী মো. ওসমান গনিকে স্বাক্ষী না দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাসহ হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই বিষয়ে লোহাগাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী ৮৫, তাং- ০২/০৮/১৭ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
মামলাটি যখন স্বাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে ঠিক এই মুহুর্তে জয়নাল আবেদীন ভেট্টুর পরিবারের সদস্যগণ উম্মাদ হয়ে গেছে। তারা মামলার স্বাক্ষী এবং মামলার সহযোগিতাকারীদের উপর একের পর এক হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানী করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়ে মামলার স্বাক্ষীদেরকে হয়রানী করা হয়েছে। সাজু হত্যা মামলার সঠিক বিচারের জন্য সর্বমহলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সাজু হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার পর স্থানীয় একটি মহল এই হত্যাকান্ডটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল। উক্ত রাজনৈতিক মহল বর্তমানেও সক্রিয় রয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার বাদীকে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে মামলাটি আপোষ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে এই রাজনৈতিক দুষ্কৃতকারীগণ।
উল্লেখ্য যে, যে দিন সাজু আক্তারকে হত্যা করা হয় সে দিন সরই এলাকার জনৈক রাজনৈতিক নেতা তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেন।
এরমধ্যে গেল ২৩জুলাই ২০১৯ তারিখ একই ইউনিয়নের আলমগীর সিকদারহত্যা মামলার ২নং আসামী জয়নাল আবেদীন ভেট্টু বর্তমানে আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে তার ছোট ভাই আরফাতুল ইসলামকে দিয়ে সকল হামলা মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আরফাতুল ইসলাম শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, এই মানবিক আবেদন সৃষ্টি করে মূলত সাজু হত্যা মামলার মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আব্দুল জাব্বার পরিবারের ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বদানকারী আরফাতুল ইসলাম ও আব্দুল জাব্বারের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি সকল মহল, সুশীল সমাজ এবং সর্বসাধারণকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সাজুর বৃদ্ধ মা আসমা খাতুন বলেন, আমরা সাজু আক্তারের পরিবারের সদস্যগণ অত্যন্ত গরীব ও দিনমজুর। জয়নাল আবেদীন ভেট্টু পরিবারের সদস্যদের হামলা ও মামলার কারণে আমরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে আমরা নিরাপত্তার দাবী জানাচ্ছি। বৃদ্ধ মা হিসাবে আমার মেয়ে খুনের ন্যায় বিচার দেখে আমি দেখে যেতে চাই।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.