• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
পার্বত্যাঞ্চল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১২জন ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা                    ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু,সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসব শুরু                    বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু উপলক্ষে রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র‌্যালী                    বান্দরবানে ধরপাকড়,হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ ও আটকদের মুক্তির দাবি তিন সংগঠনের                    বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তা                    রাঙামাটিতে জুম উৎসবের আয়োজন                    বন বিভাগের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সন্মেলন                    বিলাইছড়িতে আগুনে ৬টি বসতঘর পুড়েছে, আহত ১                    পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কর্মসূচি পালন                    রাবিপ্রবি’তে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত                    বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধীতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন                    রাঙামাটিতে নতুন সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা                    রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের দরপত্র প্রকাশ নিয়ে গোপণীয়তার অভিযোগ                    কাপ্তাইয়ে গাছ কাটার অনুমতি না থাকায় ব্রীজ নির্মাণে অশ্চিয়তা                    সুখ-শান্তি কামনায় বালুখালীবাসীর মহাসংঘদান                    বরকলে অজ্ঞাত রোগে ৫ জনের মৃত্যু, ১৪ জন অসুস্থ, এলাকায় আতংক                    রাঙামাটিতে জেনারেল হাসপাতালের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভা                    গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি                    স্বপ্ন প্রতিবন্ধীর সভাপতি ত্রিনা চাকমা ও সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী                    ঘাতক ট্রাক প্রাণ কেড়ে নিল রাঙামাটি সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষাথী সালেহিনের                    চ্যাম্পিয়ন লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ                    
 
ads

খাগড়াছড়ির পানির রাজা’র উত্থান ও বিদায় কাহিনী

বিশেষ রিপোর্টার,খাগড়াছড়ি : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Aug 2019   Thursday

টানা ২৭ বছর মানে সরকারি চাকুরি জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়ে দিয়েছেন বরখাস্থ প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন খাগড়াছড়িতেই। একই কর্মস্থলে এতো বছর ধরে চাকরি করার ক্ষেত্রে সম্ভবত তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে নজির সৃষ্টি করেছেন। এজন্য মানুষের মুখে মুখে তাঁকে পানির রাজা বলতেও শোনা যায়। তাঁর স্বভাবও পানির মতো। যখন যে সরকার খাগড়াছড়িতে আসে তখন সে সরকারের স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে পানির মতো মিশে যাবার লক্ষনীয় গুণ ছিল।

 

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত শাসনামলে এই প্রকৌশলী খাগড়াছড়িতে রীতিমতো বিএনপি’র নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেন। একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী হবার পরও খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তিনিই। কয়েক সাংবাদিকের মাধ্যমে দরপত্র গুপছি করে পুরো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সব কাজ হাতিয়ে নিতে থাকেন। কোন নির্বাহী প্রকৌশলী’র সাথে মতের ও স্বার্থের গড়মিল হলেই লেলিয়ে দিতেন তাঁর পোষ্য ঠিকাদারদের। সে সাথে নিজস্ব এক ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রকল্প করে হাতিয়ে নেন বিপুল টাকা। সেই টাকারই বড়ো একটি অংশ দিয়ে তিনি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় গড়ে তোলেন কয়েক’শ একরের বাগান-বিলাস। আর জেলাশহরের শালবন এলাকাতেও কিনতে থাকেন একরকে একর পাহাড়। সেই আমলের শেষ দিকে তিনি অর্থ-বিত্তের দম্ভে বিরোধে জড়ান খোদ সে সময়ের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া’র সাথেও। ওয়ান-ইলেভেন কালে চৌকষ সোহরাব দ্রুতই মিলে যান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশের সাথে। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের জালও তাঁকে আটকাতে পারেনি।

 

এর পরের আমলে তিনি সত্যি সত্যিই খাগড়াছড়িতে অন্য এক হীরক রাজা হয়ে উঠেন। গুপছি বিজ্ঞাপনে সিদ্ধহস্ত সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে তিনি আওয়ামীলীগের নেতাদের কাজ দিয়ে ‘ম্যানেজ কর্মসূচি’র জন্য সুপরিচিত এবং কারো কারো কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এই সুযোগে পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ব্যবহার করে উপ-সহকারি প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী বনে যান।  বিভাগীয় চাপাচাপিতে পড়ে বান্দরবানে বদলি হন জ্যেষ্ঠতার দুই ধাপ লংঘন করে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেই। সেখানেও ক্ষমতাবানদের বাগে আনার অসীম গুণে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আবারও খাগড়াছড়ি জেলাকে দখলে নিয়ে নেন। সেই উত্থানকাল থেকে এখনো তিনিই খাগড়াছড়ির জনস্বাস্থ্য বিভাগের একচ্ছত্র অধিপতি। ১০ বছর ধরে একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী হয়েও কিভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী পদ-মর্যাদায় একটি জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে তা যেন সবারই চোখ এড়িয়ে গেছে!

 

কথিত নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে তিনি দুই জেলার বাসাবাড়ি-যানবাহন থেকে শুরু করে সবকিছু ব্যবহার করেছেন লাট সাহেবের মতোই। কথায় আছে না, ধরাকে সরা জ্ঞান করলে তার খেসারতও দিতে হয় সেভাবেই। মন্ত্রণালয়ের বদলি আদেশকেও তিনি পাত্তা দিলেন না। গাদ্দারির ফলাফল হিসেবে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জরুরী আদেশে তিনি বরখাস্ত হলেন।

 

জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের  ২১মে  সহকারী প্রকৌশলী মো.কামাল হোসেনকে পদোন্নতিজনিত কারণে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন দিয়ে বদলি করা হয় এবং বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সকল দায়িত্ব  নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। কিন্ত বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নতুন পদায়নকৃত কামাল হোসেনের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় তিনি বান্দরবানের যোগ দিতে পারেন নি। পরবর্তীতে ১১ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো.খাইরুল ইসলাম মো.কামাল হোসেনকে বান্দরবানের পরিবর্তে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সোহরাব হোসেনকে বান্দরবানে বহাল রাখা হয়।

 

কিন্তু তাতেও মন ভরেনি সোহরাব হোসেনের। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো.সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে ২৮ জুলাই  অপরাহ্নের পর খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা) সোহরাব হোসেন অব্যাহতি প্রাপ্ত অর্থাৎ স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গন্য হবে। দুই জেলায় পানির রাজা এবার একটু নড়েচড়ে বসেন। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজত্বে পোস্টিং পাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেনের ওপর। তাঁকে কর্মস্থলে যোগ দিতে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে ব্যর্থ হয় তিনি বেছে নেন তাঁর সেই পুরানা পথ। বুধবার তাঁরই সুপরিকল্পনায় যোগদানের প্রথম দিনেই সোহরাবের ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তদের হাতে লাঞ্চিত হয়ে অফিস ত্যাগ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন। কিন্তু অসহায় এই কর্মকর্তার পাশে দাঁড়ান সোহরাবেরই ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা। তাঁরাও আঁচ করতে পেরেছেন এতোদিনের পানির রাজা মনে হয় বানের তোড়ে ভেসে যাবেন।

 

এবার যেনো হাটে হাড়ি ভাঙলো। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে ভযাবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের দোহাই দিয়েই উপ-সহকারি প্রকৌশলী হয়েও তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলী’র দায়িত্ব পালন করেন। এই দুর্বলতার বশে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকে তিনি পুকুরচুরির সুযোগ করে দেন।

 

মূলত সোহরাব হোসেন কারসাজির মাধ্যমেই উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েও বিধি বর্হিভুর্তভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীর সুযোগ ভোগ করেছেন।

 

জেলা পরিষদের হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো.বদিউল আলম জানান, জনস্বাস্থ্য বিভাগের সোহরাব হোসেন একজন উপসহকারি প্রকৌশলী’র পদের বিপরীতেই বেতন পান। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী কী না সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো জানবেন। 

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম সার্কেলের দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন চৌধুরী জানান, সোহরবার হোসেন একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী। দীর্ঘ সময় ধরে একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে পালন প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই জায়গায় আসলে আমরা সার্পোট করছি না। এটি আমাদের প্রশাসন পরিচালনা’র আইনেও সার্পোট করে না। আমাদের বিভাগও এসব চাচ্ছে না। তাই বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং করা হচ্ছে। পরবর্তীতে হয়তো এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিবে।

 

মন্ত্রণালয় ঠিকই ব্যস্থা নিয়েছে। আর তাতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোহরাব হোসেনের বিদায়পর্বকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু বেচারার চাকরিচ্যুতি এবং বাগান সা¤্রাজ্য নিয়ে কী হয় সেদিকেই যেনো সবার নজর।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.     

ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ