উদ্ধোধনের প্রায় ৭৬ দিন পর শনিবার থেকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে। তবে কলেজের ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর দিনে মেডিকেল কলেজ বিরোধীতাকারীরা কোন কর্মসূচি না দিলেও মেডিকেল কলেজের আশপাশের পুলিশ ও বিজিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাশের অস্থায়ী একটি বিল্ডিং-এ প্রথম ব্যাচের ২০১৩-১৪ সালের শিক্ষা বর্ষের এমবিবিএস কোর্সের ৫১ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে কলেজের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত এক পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় বক্তব্যে রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ মোস্তফা জামান, জেলা সিভিল সার্জন ডা.স্নেহ কান্তি চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ ও কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান। এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল, রাঙামাটি জেরারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নুয়েন খীসা প্রমুখ।
সূত্র জানায়, ক্লাশ শুরুতে ৪৪ জন শিক্ষার্থী যোগদান করেছিল। বাকী ৭জন শিক্ষার্থী দুএক দিনের মধ্যে পাঠদানে অংশ নেবে। এছাড়া বর্তমানে এ মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন জন শিক্ষক যোগদান করেছেন। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে প্রথম ব্যাচে অন্যান্য কোঠায় ১০জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল।
এদিকে, রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালুর বিরোধীতাকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি না দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজের আশপাশে পুলিশ ও বিজিবি কঠোর নিরাপত্তা জোরদার ছিল। এর মধ্যে পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ছিল। তিন স্তরের নিরাপত্তা মধ্যে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রবেশ মূখে, হাসপাতালেরগেইটের সামনে এবং মেডিকেল কলেজ গেইটের সামনে। এছাড়া মেডিকেল কলেজের আশপাশে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন ছিল।
অন্যদিকে, ক্লাশ শুরুর প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকরা এসেছিলেন। তারা তাদেরছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তাসহ সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আশাকরি আজকের যেভাবে সুন্দর পরিবেশের মধ্য ক্লাশ শুরু হয়েছে সেভাবে কার্যক্রম চলবে এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা সুন্দরভাবে লেখাপড়া ও ভাল রেজাল্ট করে একজন যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে বেরুবে।
কলেজের শিক্ষার্থী কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহাশীষ চক্রবতী, শীমা আক্তার, নাজমুল নাহার, রফিকুল ইসলাম, সীমা চাকমা, প্রহর চাকমা, নুজরুল ইসলাম ও নাজমুল নাহার জানায়, ১০ জানুয়ারী অনাকাংখিত ঘটনার জন্য যথাসময়ে ক্লাশ শুরু করতে পারিনি। ফলে দীর্ঘ আড়াই মাস পর ক্লাশ পাঠদান শুরু করায় অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে তারা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলে এবং কলেজের পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠদানে আনুসাঙ্গিক জিনিপত্র থাকলে পিছিয়ে পড়া থেকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেছে। শিক্ষার্থীরা কলেজের জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান জানান, আজ শনিবার থেকে মেডিকেল কলেজের ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছি। সবকিছুই সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে। আশা করছি আর কোন সমস্যা হবে না। তিনি আরও জানান, ক্লাশ শুরুর প্রথম দিনের ৫১ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৪ জন শিক্ষার্থী ক্লাশে উপস্থিত রয়েছে বাকী ৭ জন শিক্ষার্থী দুএকদিনের ক্লাশে যোগদান করবে। বর্তমানে তিনিসহ ৩জন শিক্ষক রয়েছেন ও বাকী শিক্ষকরা অতিদ্রুত সম্ভব নিয়োগ পেয়ে যোগদান করবেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আজ সুন্দর ও শান্তিপুর্নভাবে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ক্লাশসহ একাডেমিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলবে। তিনি আরও জানান, মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত পরিমানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রাষ্ট্র ও কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি আরও বেশী করে নিরাপত্তা দরকার মনে করে প্রয়োজন অনুসারে নিরাপত্তা বর্ধিত করা হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী টেলিকনফারেন্সের মাধ্যেমে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর বিরোধিতা করে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ আদিবাসী সুশীল সমাজের কয়েকটি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিল। উদ্ধোধনী দিনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলায় অবরোধের ডাক দেয় । এ অবরোধকে কেন্দ্র করে শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রুপ নেয় এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ এবং পরবর্তীতে কারফিউ জারি করে। এর পর থেকে মেডিকেল কলেজের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.