পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের তৃতীয় সংঘরাজ ও শিজকমুখ বৌদ্ধ বিহারের আজীবন অধ্যক্ষ প্রয়াত ভদন্ত অভয়তিষ্য মহাথেরোর বুধবার জাতীয় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজক এলাকায় অনুষ্ঠিত অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বুদ্ধ ধর্মীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল গ্রহন, অষ্টপরিস্কার দান, দাননীয় সামগ্রী উৎসর্গসহ নানান বিধ দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ধর্মদেশনা দেন বাংলাদেশ পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের, রাঙ্গামাটি রাজ বন বিহারের আবাসিক প্রধান ভদন্ত প্রজ্ঞালংকার মহাথের, চট্টগ্রাম বিশ^ বিদ্যালয়ের পালি কলেজের চেয়ারম্যান ড. জ্ঞারত্ন মহাথের, সাদা মনের মানুষ ও পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের উপ সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরো, রাঙ্গামাটির আনন্দ বিহারের অধ্যক্ষ ও বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট এন্ড স্কুলের সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের’সহ ঢাকা, সিলেট ও বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষু প্রধান।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে দুপুরে মহাপ্রয়াণপ্রাপ্ত মহামান্য সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাথেরোর নির্বাণ ঘরের পাশে ঐতিহ্যবাহী কাটলা নৃত্য পরিবেশন শেষে আতশবাজির মধ্য দিয়ে অভয়তিষ্য মহাথেরোর দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
ধর্মীয় ও দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য সবির কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা’সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বৌদ্ধ ভিক্ষু, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার বৌদ্ধ নর-নারী অংশ নেন।
এদিকে রাঙামাটি জেলা পরিষদ পরিবারের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা মহাপ্রয়াণপ্রাপ্ত মহামান্য সংঘরাজ প্রয়াত অভয়তিষ্য মহাথেরোর কেবিনে ফুল দিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদনকালে তার সহধর্মীনি উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যুগে যুগে পৃথিবীতে শান্তির বানী ছড়িয়ে দিতে কোন কোন মহামানবের জন্ম হয়। সেই মহামানবের মধ্যে একজন হলো মহাপ্রয়াণপ্রাপ্ত সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাথেরো। তিনি সর্বদাই মানব ও প্রাণীকুলের মঙ্গলার্থে বুদ্ধের ধর্মীয় ও শান্তির বাণীগুলো ছড়িয়ে গেছেন। যার ফলে সমাজে এখনো আত্নমানবতা সেবা, বিশ্বাস ও কল্যাণকর কাজগুলো হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, এখনো আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা ভালো ও খারাপ কাজগুলো জেনে বুঝে খারাপ কাজে অগ্রসর হয়ে থাকে। ফলে ইহকালেই সেই খারাপ কাজ গুলোর ফল ভোগ করে থাকে। তাই বুদ্ধের বানীগুলোকে বুলে লালন পালন করে আমাদের সত্য ও ন্যয়ের পথে এগিয়ে যেতে হবে। খারাপ কাজ গুলো পরিহার করে দানশীল মনোভাব, মন থেকে হিংসা দূর করে মানব প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তবেই সমাজ তথা দেশ এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফের্রুয়ারী রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বার্ধক্যজনিত কারণে ভদন্ত অভয়তিষ্য মহাথেরো মৃত্যবরণ করেন। মহপ্রয়াণপ্রাপ্ত মহামান্য সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাথেরোর মরদেহ প্রায় দীর্ঘ ৯ মাস ১৭ দিন সংরক্ষণ রাখার পর বৌদ্ধ ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে অনুষ্ঠানিকভাবে তার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.