বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে এই প্রবারণা উৎসব পালন করা হয়।
এই প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে রোবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সকাল ৬ টা হতে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এর পর পর পঞ্চশীল প্রার্থনা ও গ্রহন, সকল জীবের হিতার্থে সমবেত প্রার্থনা করা সহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯ টায় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এক রিছিমি মঙ্গল শোভাযাত্রা কার্টুন ও পেস্টুন সহকারে মহালছড়ির বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বিকাল ২ টার সময় সিঙ্গিনালা কাপ্তাই পাড়াতে রিছিমি (কল্প জাহাজ) ভাসা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী মোমবাতি জ্বালিয়ে রিছিমি (কল্প জাহাজ) ভাসা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় মহালছড়ি প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির আয়োজনে মহালছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক সুইহ্লাঅং রাখাইন পিপলু’র সঞ্চালনায় মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে এক ধর্মীয় আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের সৌজন্যে মারমা নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
এই সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, মহালছড়ি জোন উপ অধিনায়ক মেজর আসিফ ইকবাল, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দত্ত, মহালছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ নুরে আলম ফকির, মহালছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুইনুচিং চৌধুরী, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রতন কুমার শীল ও মুবাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বাপ্পি খীসা।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন প্রত্যেকে ধর্মীয় নীতি অনুসরনের মাধ্যমে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করা সম্ভব। ভগবান বুদ্ধের অহিংসা পরম ধর্ম বাণীকে বুকে লালন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
উল্লেখ্য যে, কথিত আছে এক সময় বৈশালীতে দূর্ভিক্ষ, মহামারি ও অমনুষ্যে এই ত্রি-বিধ উপদ্রবে রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিল। তাতে প্রজারা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং রাজার কাছে সেই বার্তা পৌঁছালেন। রাজাও প্রজাদের এমন অবস্থা দেখে চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সহসায় এই দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য রাজ্যের রাজা প্রমূখ অমাত্যের উপদেশে বুদ্ধের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। বুদ্ধ তখন রাজ গৃহে বিম্বিসার রাজার দানকৃত পূর্বারাম বিহারে অবস্থান করছিলেন। বৈশালীবাসীগণ মহালি লিচ্ছবি ও রাজা পুরোহিত পুত্রকে রাজা বিম্বিসারের কাছে পাঠালেন এবং বিনীতভাবে এই বিষয় অবগত করলেন। বিম্বিসার রাজা এবং মহালি লিচ্ছবি সকলেই বুদ্ধকে ফাং করলেন বৈশালীতে গমন করার জন্য। বুদ্ধ সেই ফাং ( আমন্ত্রন) গ্রহন করে বিম্বিসার রাজার সাথে বৈশালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।
বিম্বিসার রাজা বুদ্ধের গমনা-গমনের সকল রাস্তা নানা সাজে সজ্জিত করে দিল। গঙ্গা নদীতে রাজা বিম্বিসার ২টি নৌকা সজ্জিত করে বুদ্ধের জন্য সুব্যবস্থা করে দিলেন, যাতে বুদ্ধ তার পাঁচশত শিষ্যসহ সুন্দর ভাবে বৈশালী পৌঁছতে পারেন। । এই মহান চিরসত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জাতী ধর্ম, বর্ণ নির্বেশেষে বৌদ্ধরা সকলেই জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন করে থাকে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.