খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ৩৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি বিদ্যালয়ে এই বায়োমেট্রিক ব্যবহার পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মানিকছড়ি উপজেলার সাপুড়িয়া পাড়ার আবুল কালাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দিচ্ছেন। যদিও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই মেশিনের ব্যবহারের বিস্তারিত নিয়মাবলী এখনো পাওয়া যায়নি। এ পদ্ধতি চালু না হলেও প্রধান শিক্ষক কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রত্যাশা নামের একটি কোম্পানী গেল ২৭ আগষ্ট থেকে মানিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৩৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি স্থাপনের কাজ শুরু করে। বর্তমানে কয়েকটি বিদ্যালয়ে এই বায়োমেট্রিক ব্যবহার পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে।
শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে সাপুড়িয়া পাড়া আবুল কালাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিনুমং মারমা জানান, সরকারের নির্দেশ থাকলে সকল কার্যক্রম পালন করতে বাধ্য। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এই পদ্ধতি চালু হলে সকল শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে এবং নিদিষ্ট সময়ে বিদ্যালয় থেকে যেতে হবে। এতদিন যারা অনিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে হাজিরা দিতেন তাদের এখন আর সেই সিন শেষ হয়ে গেছে।
মরাডুলু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবি মোহন চাকমা জানান, তার চাকরি আর মাত্র বাকী আছে মাত্র পাঁচ বছর প্রায়। অনেকটা চাকরির শেষ সমেয় এসে এই সুবিধা পাওয়ায় অনেকটা ভালো লাগছে। তবে তিনি বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে বলে আরো জানান,কারন মেশিনটি সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালাতে হবে। তিনি আরো বলে এই বায়োমেট্রিক মেশিন দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আরো আগে নিলে ভালো হতো।
মানিকছড়ি একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেশিনটি দাম একটু বেশি। বেশি হলে ও করার কিছু নেই, কারণ সরকারী নির্দেশনা মানতে হবে। এছাড়া তাদের কারো ব্যাক্তিগত টাকা দিতে হচ্ছে না। এজন্য সরকার স্লিপের টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মামুন হোসাইন জানান, কাস্টমাইজ সফটওয়্যার মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিস জেলা শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিস টু সেন্ট্রাল সার্ভার মনিটরিং এর সংযোগ থাকবে বলে শুনেছি। যদি এটি হয় তাহলে দামটা খুব বেশি নয়।
প্রত্যাশা কোম্পানী প্রতিনিধি নিতু প্রসাদ জানান, মানিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৩৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। এই বায়োমেট্রিক মেশিনটি ভালো মানের এবং তিন বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টিসহ কাস্টমাইজ সফটওয়্যার প্রতিটি শিক্ষা অফিসে মনিটরিং এর জন্য সংযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বায়োমেট্রিক মেশিনের স্বপ্ল দামের রয়েছে। আর সার্ভিসের ক্ষেত্রে একজন কোম্পানির প্রতিনিধি সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন। কোথাও কোন ধরনের সমস্যা দেথা দিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধি তা ঠিক করে দিতে বাধ্য।
মানিকছড়ি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শুভাশীষ বড়ূয়া বলেন সরকারী সকল নিয়ম কানুন মেনে মানিকছড়ি উপজেলায় মোট ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৫ টি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা মূলক ভারে চালু করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার সাথে সাথে সকল বিদ্যালয়ে চালু করা হবে।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নির্দেশ অনুযায়ী মানিকছড়ি উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মেশিন ক্রয়ের জন্য কোন শিক্ষকের ব্যাক্তিগত থেকে টাকা দিতে হচ্ছে না। এ জন্য এ বছর স্লিপের টাকা আগের বছরের থেকে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এ ডিজিটাল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই জরুরী ছিল। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী একটি নিদিষ্ট কোম্পানী থেকে কেনা জন্য প্রধান শিক্ষদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সরকারী নির্দেশনা রয়েছে সেহেতু মেশিনটি ভালো হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.