দালালিপনা ও অস্তিত্ব বিক্রিকারীদের চরম মূল্য দিতে হবে-উষাতন তালুকদার

Published: 26 Jul 2019   Friday   

পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে অভিযোগ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি আসনের সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেছেন যারা জাতিকে বিভক্তি করছে, যারা দালালিপনা করে নিজের অস্তিত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে তাদেরকে একদিন চরম মূল্য দিতে হবে।

 

তিনি সকলকে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে কাজ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

 

শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে  ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নবীন বরন ও ২০১৪-১৫ ব্যাচের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি  এই হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

 

"জুম পাহাড় ডাকছে তোমায় করোনা হেলা হে নবীন এসেছে ক্ষণ ভাসাও মুক্তির ভেলা" শ্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক  রামভাই পাংখোয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগ্রামী সদস্য রবিধন চাকমা।সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃতি চাকমা। নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র রবি বিকাশ চাকমা এবং বিদায়ীদের পক্ষে  বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী এ্যাঞ্জেলা থিগিধি।

 

অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থী ও রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী এবং প্লুং ব্যান্ড শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা  দেয়া হয়।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন,  জীবন মানে সংগ্রাম।আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। সে জন্য আজকের তরুণ সমাজ, তথা নবীন সমাজকে তাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়ের পথ বেছে নিতে হবে।

 

তিনি বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রতি বছর যে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে সেটির উদ্দেশ্য হলো নবীন সমাজকে তার দায়িত্ব কর্তব্য, শেকড় সম্পর্কে অবগত করা।তিনি নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের সমুদ্র। এই জ্ঞানের সমুদ্রের নিজেকে বিলাসিতায় গাঁ না ভাসিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চেতনাবোধে উজ্জীবিত হওয়ার তাগিদ দেন।

চেতনার কোনো মৃত্যু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন আজকে যারা মনে করছেন জনসংহতি সমিতির আন্দোলন থেমে গেছে তাদেরকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রেরণা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন,  যারা আজকের নবীন স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করেছে তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হবে।দেশ ও সমাজ বিনির্মানে তাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে।তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রথম থেকেই পড়ালেখা শুরু করতে হবে।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন,   আজকে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞানার্জন করে বিদায় নিচ্ছেন তাদেরকে সেই জ্ঞান দেশ ও সমাজ গঠনে বিনিয়োগ করতে হবে।তাদের সৃষ্টিশীলতা, মেধা দিয়ে সঠিক প্লাটফর্ম খুঁজে নেয়ার অনুরোধ জানান।অর্জিত জ্ঞান, মূল্যবোধকে সামনে রেখে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, আজকে যারা বিদায় নিচ্ছে তাদের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য আহ্বান করেন।তিনি মনে মনে করেন এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে সাবেক এবং বর্তমান চবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পিসিপির এই ধরনের অনুষ্ঠানে  ছাত্র শিক্ষক মেলবন্ধনে সামিল হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক  রাম ভাই পাংখোয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জায়গা। এখানে যারা অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছে তাদেরকে সেই সুযোগটা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

 

শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামের ইতিহাস, নিজ শেকড় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। তাই সকলকে পিছুটান, নিজ শেকড়কে ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ করেন। আমাদের শেকড় সম্পর্কে নিবীড়ভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি।আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে না জানি তাহলে মূল্য হীন  হয়ে পড়বে। 

 

তিনি আরো বলেন,  পার্বত্য চট্টগ্রামের লক্ষ্য করলে দেখা যায় আজকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।নতুনত্ব বলতে আমরা এখনও কিছুই সৃষ্টি করতে পারিনি। তাই আমাদেরকে করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণে  পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় গিয়ে পাহাড়ের অবস্থা সম্পর্কে অধ্যায়ন ও সংগ্রামে সামিল হতে হবে।  জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত