দশ দিনের ব্যবধানে রাঙামাটির বালুখালী ইউনিয়নের বসন্ত পাংখো পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দু্ই জনের মৃত্যু হয়েছে। গেল শনিবার লাললমঅম পাংখোয়া (২০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরজন গেল ১০ জুলাই ভানরৌকিমি পাংখোয়া নামের এক গৃহবধুর মৃ্ত্য হয়। এতে করে পাড়ার লোকজনদের মাঝে তীব্র আতংক দেখা দিয়েছে। বর্তমানে আতংকে লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে পাশ্ববর্তী জুম ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল শনিবার বসন্ত পাংখোয়া পাড়ার লাল লমঅম পাংখোয়া নামের একজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পরে তাকে মুমুর্য অবস্থায় বিকালে জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। দশ দিনের ব্যবধানে একই গ্রাম থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা যাওয়ায় গ্রামের লোকজনদের মাঝে তীব্র আতংক দেখা দিয়েছে। এছাড়া গুজব ছড়ানো হয় কেউ গ্রামের মধ্যে মন্ত্রতন্ত্র করেছে যে লোকজন পাড়া থেকে না পালালে সবাই মারা পড়বে। তাই আতংকিত ২৮টি পরিবারের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পাশ্ববর্তী জুম ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। পাড়ার একমাত্র বসন্ত পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পাড়ার লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে গেল ১১ জুলাই বসন্ত পাড়ার বাসিন্দা রিনজাও পাংখোয়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার স্ত্রী ভানরৌকিমি পাংখোয়াকে সাথে নিয়ে গোপণে জীবতলী ইউনিয়নে এক কবিরাজের(বৈদ্য) কাছে চিকিৎসা নিতে যান। এতে তার স্বামীর সাথে ভানরৌকিমি পাংখোয়াও আক্রান্ত হন। পরে দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে কবিরাজ কৌশলে তাদের হাসপাতালে পাঠান। এতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে ভানরৌকিমি পাংখোয়া মারা যান। পরে তার স্বামী রিনজাও পাংখোয়াকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গৃহবধূ মারা যাওয়ার খবর বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে একই গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেদিনও পাড়ার লোকজন পাড়া ছেড়ে সবাই অন্যত্র পালিয়ে যান। তবে গেল ১১ জুলাই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে একটি মেডিকেল টিম বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় গিয়ে আক্রান্ত ৮জনকে চিকিৎসা সেবা দিলে তারা সুস্থ হয়ে উঠেন।
বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় চিকিৎসা দেয়া মেডিকেল টিমের লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়ে গেল ১১জুলাই মেডিকেল টিম গিয়ে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়েছে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে একজন ডায়রিয়া রোগীর ৪ থেকে ৫বার পাতলা পায়খানা হলে মারা যাচ্ছে তা ধারনার বাইরে। তাই ডায়রিয়া ছাড়া অন্য কোন রোগ কিংবা কলেরা বা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার করে জানা সম্ভব হবে।
জেলা সিভিল কার্যালয় জানায়, রাঙামাটির দশ উপজেলায় গেল সাড়ে ৬ মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৫জন। এর মধ্যে চলতি মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩৭০ জন।
বসন্ত পাংখোয়া পাড়ার হেডম্যান(মৌজা প্রধান)চিয়ালজল পাংখোয়া জানান, তার পাড়ায় গেল ১০ জুলাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। গেল শনিবার এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন মারা গেছেন। তাই পাড়ার লোকজনের মাঝে তীব্র আতংক দেখা দেয়ায় লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানে তিনি মৌজা প্রধান হওয়ায় একজনকে সাথে নিয়ে পাড়ায় অবস্থাস করছেন। তিনি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বালুখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা জানান, তার ইউনিয়নের বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় দশ দিনের ব্যবধানে ডারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। গেল ১১ জুলাই মেডিকেল টিমও পাঠানো হয়েছে তারা আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন। কিন্তু গেল শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আবার একজন মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, নতুন করে কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিয়মিত খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হলে সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পাড়ার লোকজনদের খাবার পানি আগুনে ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য ও সচেতনা সৃষ্টিতে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন জানান,ডাঃ শহীদ তালুকদার বলেন,কয়েক দিন আগে বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে মেডিকেল টিম পাঠিয়ে দিয়ে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আরো একজন আক্রান্ত হয়েছে শুনেছি। তারপরও আরো একটি মেডিকেল টিম আজ সোমবার পাঠানো হচ্ছে সেখানে যা যা চিকিৎসা প্রয়োজন তা করা হবে।
তিনি আরো জানান, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.