কাপ্তাইয়ে মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

Published: 02 Jun 2019   Sunday   

প্রতিবেশি কতিপয় ব্যাক্তির মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করা মোঃ কাসেমের কন্যা মুন্নি আক্তার প্রকাশ- বিবি ফাতেমা (১৬)।

 

শনিবার(১ জুন) সকালে কাপ্তাই উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনার কয়লার ডিপো এলাকার কর্ণফুলী নদীতে এঘটনা ঘটেছে। আত্মহত্যা করার আগে মুন্নি একটি চিরকুটে তার বাবা আর ভাইকে উদ্দেশ্য করে লিখে যায় "বাবা,ভাইয়া,তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও,আমি নদীতে পড়ে মরে যাচ্ছি"। আত্মহত্যা প্ররোচনায় জড়িতদের বিরোদ্ধে তদন্ত করে তাদের শাস্তির দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসি। এব্যাপারে কাপ্তাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।

 

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনার কয়লার ডিপো এলাকার পাঁচতলা বিল্ডিং সংলগ্ন ব্যারাকে বসবাসরত কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করা মাছ ব্যবসায়ী মোঃ কাসেমের কন্যা মুন্নি আক্তারের সাথে সম্প্রতি বন্ধুত্ব হয় চট্টগ্রামের ইপিজেট এলাকার হাফেজ এমরান হোসেনের ছেলে মোঃ ফরহাদের (১৭) সাথে। গত বৃহস্পতিবার(৩০ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে চন্দ্রঘোনায় আসে ফরহাদ।এরপর ফাতেমার কয়লার ডিপোস্থ বাসার সামনের পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মিনিট পাঁচেক কথা বলে তারা দু`জন। কিন্তু এবিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল। তারা ডেকে আনে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে। শুরু হয় কুটকৌশল। এক পর্যায়ে ছেলেটিকে আটকে রাখা হয় স্থানীয় মসজিদের এক কোনায়। ততক্ষণে কুচক্রী মহলটি মুন্নি ও ফরহাদকে নিয়ে এলাকায় রটিয়ে দেয় ন্যাক্কারজনক সব রটনা।

 

এমন মিথ্যা, অপবাদ শুনে ফাতেমা ছেলেটাকে বলে, যেহেতু এলাকার মানুষ আমার নামে এভাবে মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছে, সেহেতু আমাকে বিয়ে করে ফেলুন। কিন্তু ছেলেটি রাজি হয়নি। সে বলে, তোমার সাথে আমার সবেমাত্র পরিচয়, আমি হঠাৎ কিভাবে তোমাকে বিয়ে করবো? অন্যদিকে স্থানীয় মেম্বারও থানার দোহাই দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করেছে বিষয়টি সমাধানের জন্য। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় রটানো হয় নানা বদনাম। এরসাথে প্রতিবেশি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক মোঃ সাইফুল ইসলাম ও জনৈক নবীর বউ বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে সামাজিক এই মিথ্যাচার,দূর্নাম সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় মুন্নি। 

 

 ঘটনার দিন আনুমানিক সকাল ৬ টার সময় একটি চিরকুটে আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে পরিবারের সবার নিকট ক্ষমা চেয়ে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দেয় মুন্নি। পরে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরীদল টানা ১১ঘন্টা উদ্ধার অভিযান চালানোর পর ওইদিন বিকাল প্রায় ৫ টার দিকে প্রায় এক কিলোমিটর দূরে নদী হতে তার মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন মুন্নির ভাই মোঃ মোশাররফ হোসেন। 

 

চন্দ্রঘোনা ইউপি সদস্য মোঃ আজিজুল হক (প্রকাশ- মন্ত্রী) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও টাকা চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি, তারা বিষয়টি নিয়ে যেনো থানায় যোগাযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, থানার ওসিকে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন । অন্যদিকে বাসার সামনে স্বাভাবিক ভাবে দু`টি ছেলে মেয়ে শুধুমাত্র কথা বলায় কেন তাদের এভাবে হয়রানি করা হলো, তা জানতে চাইলে তিনি এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

 

কাপ্তাই থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার ঘটনার সুত্রপাত হলেও আমরা জানতে পারি শনিবার। স্থানীয়ভাবে আমাদের বিষয়টি কেউই জানায়নি। তিনি আরো বলেন, রবিবার নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাঙামাটি পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে কাপ্তাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।

 

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনারদিন বিকেলে মরদেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। সামাজিক ভাবে তাকে হেয় করার বিষয় সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তিনি জানান,  তদন্তে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে। 

 

এদিকে কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক বলেন, মেয়েটিকে সামাজিক ভাবে হেয় করায় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

 

কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এ.আর লিমন জানান, আমি শুক্রবার বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গেলে ছেলেটিকে মসজিদে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে ছেলে, মেয়ের আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, একটা ছেলেকে এভাবে আটকে রাখার কোন লজিক নেই। সে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন। কিন্তু কেন তাকে আটকে রেখেছেন? তারপর ছেলেটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, মেয়েটি সামাজিক এই অপবাদ ও মিথ্যাচার সইতে না পেরে  আত্মহত্যা করবে বলে উপস্থিত অনেককে জানায়, কিন্তু কেউই তো বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়নি। অবশেষে মেয়েটি আত্মহত্যা করলো

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত