কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ায় জলেভাসা জমিতে কৃষকদের বোরো ধান রোপণের হিড়িক পড়েছে। অন্যদিকে হ্রদের পানির স্তর কমতে শুরুর করায় জেলার দশ উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলায় নৌ যোগাযোগের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, গ্রীস্ম শুরু থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ধীরে ধীরে হ্রদের পানির স্তর কমতে শুরু করেছে। হ্রদ বেষ্টিত জেগে উঠা জলেভাসা এসব জমিতে বর্তমানে স্থাণীয় কৃষকরা বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এসব উপজেলা মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি, বরকল,লংগদু, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি। এসব উপজেলায় সময়মত বেরো ধান রোপণ করতে পারলে ভাল পাওয়ায়ার আশা করছেন কৃষকরা। এ বছর ৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হতে পারে। জলে ভাসা এসব জমিতে হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন হিসেবে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, হ্রদে পানির স্তর কমতে শুরু করায় জেলার দশ উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, জুড়াছড়ি, লংগদু ও বিলাইছড়ির মধ্যে নৌচলাচলের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি হ্রদের পানির স্তর কমায় হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপ বা ডুবোচর। পানির স্তর কমতে শুরু করায় দুর্গম কয়েকটি উপজেলায় যাত্রবাহী লঞ্চ নির্দিষ্ট স্থানে ভিড়াতে পারছে না। ছোট ছোট ট্রলার দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে হচ্ছে স্থানীয়বাসীকে।
জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা জানান, স্থানীয় চাষীদের চাহিদা অনুসারে পানি অতিরিক্ত কমে যাওয়াতে জলেভাসা জমিতে বোরোধানের আবাদ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এবং পানির স্তর কমে যাওয়ার কারণে উপজেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্ষন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ৮৮ দশমিক ২২এমএসএল(মিনস সি লেভেল)। রুল কার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে হ্রদে পানির স্তর থাকার কথা ছিল ৯০ দশমিক ৬০ এমএসএল। যা স্বাভাবিক চেয়ে ২ দশমিক ৩৮ এমএসএল পানি কম রয়েছে। রুল কার্ভ অনুযায়ী এ মৌসুমে হ্রদের সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা থাকবে ৭৬ এমএসএল পর্ষন্ত।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান জানান,কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে গত সোমবার ৪টি ইউনিট চালু রেখে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যূৎ উৎপাদন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হ্রদে ৮৮ দশমিক ২২এমএসএল-এ পানির উচ্চতায় হ্রদে নৌ যোগাযোগের ব্যাহত হওয়ার কথা নয়। তবে হ্রদ বেষ্টিত দুর্গম এলাকাগুলোর ব্যাপারে তার তেমন একটা ধারনা নেই বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্ষন্ত হ্রদে এভাবে পানির স্তর থাকবে। জুন মাসের দিকে ভারী বৃষ্টিপাত হলে হ্রদের পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য,১৯৬০ সালের কর্নফূলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তৈরী করা হয় কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ কেন্দ্র। এ বাধের ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিশাল জলধারা হওয়ায় ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায় এবং এক লাখেরও অধিক লোকজন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.