পাহাড়ীদের প্রধান সামাজিক ঊৎসব ‘বৈসুক-সাংক্রাই-বিঝু’র প্রধান আকর্ষন ছিল ‘পাজন’ তরকারী। মুল বিঝু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা দিনে ধনী-গরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে খাবার পরিবেশনের অগ্রাধিকার পেয়েছে ‘পাজন’ তরকারী।
পানছড়ি মির্জাবিল গ্রামের কার্বারী বয়োবৃদ্ধ মধু মঙ্গল চাকমা বলেন, ‘বিঝু’ উৎসবের প্রধান আকর্ষন ‘পাজন’ তরকারী। এর পরে মদ, জগরা, বিন্নিপিঠা, সান্ন্যে পিঠা,বরাপিঠা, তরমুজ, সেমাই পরিবেশন করা হয়।
মূলত ২৪ প্রকার কাঁচা তরকারী(কাঠাল,আলু,ফলমূল,সবুজ শাকসবজি) মিশ্রিত করে ‘পাজন’ তৈরী করার রেওয়াজ রয়েছে। আমাদের সময়ে ২৪ প্রকার থেকে সবজি মিশ্রিত করে তৈরী করা হয় পাজন।
তিনি আরো বলেন, আগেকার দিনের মতো এখন আর ‘পাজন’ তরকারী রান্না করা হয় না। ২৪ প্রকার কাঁচা তরকারী মিলে ‘পাজন’ তৈরী করার রেওয়াজ থাকলেও বর্তমানে অনেকেই ২৪ প্রকার থেকে কম প্রকার কাঁচা তরিতরকারী মিলে ‘পাজন’ তৈরী করছে। তবে শহরে আদিবাসীরা ৫/৭প্রকার কাঁচা তরকারী দিয়ে ‘পাজন’ তৈরী করলেও গ্রামের লোকজন ২৪ প্রকারের বেশী কাঁচা তরকারী দিয়ে এ পাজন তৈরী করে থাকে।
অন্যান্য দিনে পেট ভরে তরকারী খেলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিঝু’র দিনে পেটভরে ‘পাজন’ খেলেও পেট খারাপ হয় না।
পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা ও পূজগাং মূখ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় চাকমা বলে- বিঝু দিনে প্রতিটি আদীবাসীকে কমপক্ষে ৭টি ঘরে ‘পাজন’ খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাই আদিবাসী নারীরা সু-স্বাদু করে ‘পাজন’ তরকারী রান্নার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। ধনী-গরীব সবার ঘরে রান্না করা হয়েছে পাজন। উৎসবের দিনগুলোতে সবার বাড়ির দ্বার ছিল উম্মুক্ত। বাড়ির সামর্থ্য অনুযায়ী বিঝুর দিনে অতিথিদের পরিবেশন করা হয়েছে।
মুল বিঝু আর গজ্জ্যাপজ্জ্যা বিঝু দিনে ‘পাজন’ খাওয়ার জন্য শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, ছেলে-বুড়ো সবাই উৎসবের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে পাড়া থেকে পাড়ায়, গ্রাম থেকে গ্রামে, এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে।
চাকমা, মার্মারা, সাঁওতালরা সম্প্রদায়ের লোকজন পাজনকে বলে গন্দ। ত্রিপুরা সম্পদায়ের লোকেরা বলে পাজনকে বলে লাবারা। যে সম্প্রদায়ের লোকজন যে নামেই ডাকুক না কেন সকল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য একই।
গৃহীনি অংক্রাইয়ো মার্মা বলেন, বাসায় অন্যান্য দিনে পাক করা হলে বলা হয় গন্দ। আর বিঝুর দিনে বলা হয় পাজন। শিক্ষিকা মিতু চাকমা, অংক্রাইয়ো মার্মা বলেন, অন্যান্য বছরে মতো এ বছরও গ্রামে গ্রামে সু-স্বাদু পাঁচন তরকারী রান্নার প্রতিযোগিতা চলেছে। কারটা বেশী সু-স্বাদু হয়েছে তা বলা মুশকিল। পাজন রান্না শেষ হওয়ার পর পারই পাজন খাওয়ার জন্য আহবান করেছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.