সম্প্রতি গেল ১৯ জানুয়ারী থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো তিন দিন ব্যাপী দিন ব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নাট্য উৎসব। প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয়েছে জয় বাংলা পুরুস্কার প্রাপ্ত জুম ফুল থিয়েটারের পরিবেশনায় ‘আদেই ধন’(গুপ্ত ধন)।
নাটকটি রচনা করেছেন উদীয়মান নাট্যকার নিরুপম চাকমা ও নাটকের পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ননাবি চাকমা। নাটকটির আবহ সংগীত সহযোগিতায় ছিলেন শাহাদাত হোসাইন ও আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন ঋভু ধ্রাবিড়। নাটকের অভিনয় করেছেন শান্দিলালের ভূমিকায় সাগর চাকমা, বানু- জুঁই চাকমা,ধলাচান-রিগেন চাকমা, রন্দিমালা-সুরুপা চাকমা,আয়োজক-সুশান্ত চাকমা, হিরব্বেধন/প্রহরী(১)-সৌরভ তংচংগ্যা, বৈদ্য- প্রিয় লাল চাকমা, আদাম্মে/সেবিকা(১)- সুইটি চাকমা, আদাম্মে/সেবিকা(২)- সুজাতা চাকমা, আদাম্মে মিলে/সেবিকা(৩)-আঁখি রাখাইন, আদাম্মে মিলে(৪)- উজ্জলা চাকমা এবং রাণী মা-লাভী চাকমা।
নাটকটির রচিয়তা ও জুম ফুল থিয়েটারের পরিচালন নিরুপম চাকমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের নাট্য ধারা বজায় রাখতে ও নাটককে সমৃদ্ধি করতে প্রতি বছর রাঙামাটি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট এই নাট্য উৎসব আয়োজন করে থাকে। এবারের প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয় আদেই ধন। এই নাটকে আমাদের সমাজে যে কুসংস্কার ও লোভ রয়েছে তার পরিণতি কি হয় তা সমাজকে বুঝিয়ে দিতে এবং এখনো সেই পুরাতন ধ্যান-ধারনায় সমাজের লোকজন বিশ্বাসী তা যে মিথ্যা বোঝাতে এই রুপক গল্পধর্মী নাটক।
নাটকের সারমর্ম হলঃ তজিমপুর রাজ্যো এক দয়ালু গুনবতী লক্ষী রাণী মার রাজ্যে শাসন ছিল। তার রাজ্যের এক গ্রামে শান্দিলাল আর বানু ছোট সংসার। শান্দিলাল যাত্রা প্রিয় মানুষ এবং সে তার মনের খোরাক মেটানোর জন্য যাত্রাপালা করে। যাত্রা পালাতে যা উর্পাজন হয় তা দিয়ে তার সংসার চলে না। তাই দিনের বেলায় জুম চাষ করে রাতের বেলায় যাত্রা পালার মহড়া দেয়। তাদের পাশ্ববর্তী গ্রামে ধলাচান আর রন্দিমালার অভাবের সংসার। ধলাচানের অভাবের সংসারের দায়িত্ব পালনের অনিহা এবং অবহেলার কারণে রন্দিমালাকে একাই সংসারের ভার নিতে হয়েছে। সে রাণীর মা রাজ প্রাসাদে গৃহী কর্মী হিসেবে কাজ করে এবং যা উপার্জন করে তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। সংসারের অভাবের কারণে তাদের একমাত্র সন্তানকে বাচাঁতে পারেনি মহামারী অসুখের হাত থেকে। সেই শোক রন্দিমালা ভূলতে পারে না। তাই সে স্বামীকে রাণী মা ঘরে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। বিপরীতে ধলাচান রন্দিমালাকে রাণী মা-র প্রাসাদে চুরি করার প্রস্তাব দেয়। রন্দিমালা প্রথম দিকে রাজী না হলেও পরে স্বামীর প্রলোভনে ফাঁদে পা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চুরি করতে যায় তারা। মোহর-স্বর্ন-অংলকার ভর্তি একটি কলসী নিয়ে রাজ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে প্রহরীরা দুর থেকে দেখতে পায়। ধলাচান আর রন্দিমালাকে প্রহরীরা তাড়া করে। রন্দিমালার হাতে কলসীটি ছিল। অনেক রাস্তা দৌড়ানোর ফলে সে ক্লান্ত হয়ে যায় এবং প্রাণ ভয়ে রাস্তায় কলসীটি রাস্তা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
শান্দি লাল রাতে যাত্রা পালা মোহড়া থেকে ফেয়ার পথে সে কলসীটি পায় এবং সে ধারনা করে নেয় অদেই ধন(গুপ্ত ধন) হিসেবে শান্দিলাল কলসটি বাড়ীতে নিয়ে এবং মুরগীর ঘরে লুকিয়ে রেখে দেয়। অপরদিকে ধলাচান রন্দি মালা কলসীটি যে রাস্তায় ফেলে রেখে এসেছিল সেখানে অনেক খোজাখোজি করে। কলসীটি না পেয়ে ধলা চান রেগে যায়। এক পর্যায়ে ঝগড়া লিপ্ত হয়ে তা হাতাহাতিতে রুপ নেয়। ধলাচান রন্দিমালাকে গলা টিপে মেরে ফেলে। বাড়ীতে লাশটি নিয়ে ফেলে রেখে সে আত্নগোপণ করে।
প্রহরীরা অনেক খোজাখোজির পর চুর ধরার ব্যর্থ হয়ে পর দিন সকালে রাজ প্রাসাদে ফিরে যায় এবং রাণী মাকে জানায়। রাণী মা আবার তন্দোতন্দো করে খোজার অদেশ দেন প্রহরীদের। এমন সময় রন্দিমালার মৃত্যুর খবর একজন গৃহকর্মী রাণীকে জানায়। সে আরো জানায় তার স্বামী পলাতক। তাই রাণী মা ধলাচানকে ধরে আনার নির্দেশ দেন প্রহরীদের। অপরদিকে কলসীটির জন্য শান্দিলালের জীবনে নতুন মোড় নেয়। প্রাত্যেহিক জীবনে অনিয়মের দেখা দেয়। প্রতিবেশীদের সাথে তার দ্বন্ধ তৈরী হয়। স্বামীর এমনটা অবস্থায় চিন্তিত হয়ে হয়ে বানু।
তাই বানু বৈদ্যর সাথে দেখা করতে যায় এবং পরামর্শ নেয়। পরদিন বৈদ্য এসে শান্তিলালকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঝাড়ফুক করে যায়। পরে বৈদ্য আর প্রতিবেশীরা চলে গেলে শান্তি লাল বানুকে মারতে তাড়া করে। অপরদিকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ধলা চান ভিক্ষুক ছন্দ বেছে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। তার উদ্দেশ্য কলসীটি বের করা। বানু মুরগীর ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে কলসীটি আবিস্কার কওে এবং শান্দি লালকে চিতকার শুনে সেখানে যায়। কলসীটি কথা গোপণ রাখার জন্য অনুরোধ করে শান্দি লাল। ওই সময় ভিক্ষুক তাদের বাড়ীর উঠানে উপস্থিত হয় ভিক্ষার জন্য। সে দেখে ফেলে কলসীটি। বানু কলসিিট নিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘরে প্রবেশ করে।
ভিক্ষুক না দেখার ভান করে ভিক্ষার জন্য এগিয়ে যায়। এমনটা সময় ধলাচান তার অসল রুপে এসে চুরি বের কওে শান্দিলালের গলায় চেপে ধরে। হুমকি দেয় কলসীটি বের করে দিতে। স্বামীর প্রাণনাশ হবে বলে বানু কলসীটি বের করে ধলাচানের পায়ে কাছে রেখে যায়।
কলসীটি পেয়ে ধলাচান শান্দিলালকে ছেড়ে দেয়। ওই সময় প্রহরীরা এসে হাজির হয়। ধলাচানকে বন্দি করতে এসে চুরি হওয়া কলসীটি দেখতে পায়। প্রহরীরা তাই সন্দেহভাজনে শান্দিলাল আর বানুকে বন্দি করে নিয়ে যায়। পরিশেষে রাজ প্রাসাদে বিচারে ধলাচান শাস্তি পায় আর অন্যদিকে শান্দিলাল আর বানুকে মানসন্মানের ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেয় এবং রাজ প্রাসাদে চাকরী দেয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.