বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫জন আহত,আটক ১

Published: 11 Mar 2015   Wednesday   

বাঙালী ভিত্তিক সংগঠন জাগো পার্বত্যবাসী ব্যানারে বান্দরবানে বুধবার থেকে ৭২ ঘন্টার হরতাল চলাকালে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষ ও সন্তু লারমার গাড়ী বহরের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫জন আহত হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ১ জনকে আটক করেছে।

 

জানা গেছে, বাঙ্গালী ভিত্তিক নতুন সংগঠন জাগো পাবর্ত্যবাসী ব্যানারে বান্দরবান জেলায় পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ বন্ধ ও বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চরিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) আগমনের প্রতিবাদে বুধবার থেকে ৭২ ঘন্টা হরতালের ডাক দেয়। সন্তু লারমা পূর্বনির্ধারিত তিন দিনের সফরে বুধবার সকালের দিকে রাঙামাটি থেকে বান্দরবানে যান। এসময় সন্তু লারমার বিশাল গাড়ী বহরের পেছনে থাকা একটি জীপ গাড়ীকে বালাঘাটা বাজার এলাকায় পৌছালে হরতাল আহ্বানকারীরা বাধা দেয়। এতে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষের রূপ নেয়। এতে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এ সময় বালাঘাটা বাজার এলাকা রনক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন, মংবাথোয়াই কার্বারী (পাড়া প্রধান), উশৈথোয়াই মার্মা, পরিমল চাকমা, রকি তঞ্চঙ্গ্যা ও রাম বাবু মার্মা। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা হলেন, মংবাথোয়াই কার্বারী, রকি তঞ্চঙ্গ্যা ও রাম বাবু মার্মা। অবশ্যই সন্তু লারমাকে বহনকারী গাড়ীটি স্বর্ণজাদী এলাকায় পৌছালে সেখানে অপেক্ষারত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের প্রহরায় জেলা সার্কিট হাউসে অবস্থান নেন সন্তু লারমা। পুলিশ মেম্বার পাড়া থেকে মো: হুমায়ন নামের এক যুবকে আটক করেছে পুলিশ।

 

এদিকে সকালের দিকে হরতাল আহ্বানকারীরা শহরের বালাঘাটার স্বর্ণজাদী এলাকায় স্টিল ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলে রেখে দেয় এবং শহরের ট্রাফিক মোড়ে জড়ো হয়ে হরতাল আহ্বানকারীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ব্রিজের পাটাতন তুলে নেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পুর্নরায় মেরামত করেন। হরতালের প্রথম দিনে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। শহরের কোনো যানচলাচল করেনি। যান চলাচল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি, সাধারণ মানুষরা বিপাকে পড়েন।

 

অপরদিকে, ঘটনার পর পর পরিস্থিতি শান্ত রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে এবং স্থানীয়দের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠে।

 

জাগো পাবর্ত্যবাসী জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবিদুর রহমান বলেন, পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ বন্ধে ও সন্তু লারমার আগমনের প্রতিবাদে এ হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি যতক্ষন পর্যন্ত বন্ধ হবে না ততক্ষন পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সহ-সভাপতি উ চ মং মার্মা দাবি করে জানান, তাদের ৪ জন নেতাকর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের ১১জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তারমধ্যে ৫জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জলিমং মারমা বলেন,শুক্রবার সদর উপজেলা ফারুক পাড়ায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে যোগ দিতে পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী সন্তু লারমা বান্দরবান সফরে এসেছেন।

 

জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, সন্তু লারমার গাড়ী বহরের শেষের দিকে একটি গাড়ীতে উত্তেজিত জনতা আক্রমন চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপুর্ন সড়কগুলোতে টহলে রয়েছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত