থানচির দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের আকার প্রকট

Published: 15 Jul 2014   Tuesday   

পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম থানচি উপজেলায় ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের প্রকট আকার ধারন করেছে। জনপ্রতিনিধির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ দিনে শুধুমাত্র থানচি উপজেলা সদর, রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সরকারি কর্মকর্তারা এতজনের মৃত্যুর বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ব্র্যাকের কর্মকর্তারা গত রোববার ও সোমবার দুই দিনে দুই শিশুর ম্যালেরিয়ায় (সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া) মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত করেছেন। থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেরকারী উন্নয়ন সংস্থাসহ একাধিক সূত্র মতে, থানচির দুর্গম এলাকা রেমাক্রি ও তিন্দু এলাকায় বিজ্ঞান সম্মত কোনো চিকিৎসা সেবা নেই। মানুষেরা ওজা, বৈদ্য ও কবিরাজের উপর নির্ভরশীল। যাতায়াত ব্যবস্থা দুগর্ম হওয়ায় স্থানীয় গরীব অসহায় লোকজন সহজে স্বাস্থ্য কেন্দ্র মুখি হতে চায় না। যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবদি নিয়ে আসতেই পথে রোগীর মৃত্যু ঘটে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ওইসব এলাকায়। হঠাৎ করে ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। কি কারণে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সিভিল সার্জন ও ব্র্যাক জানিয়েছে।

ব্র্যাক অফিস সূত্র জানিয়েছে, সাত উপজেলায় গত ৪০ দিনে তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে ১৮শ ৮৭ জনের কাছে ম্যালেরিয়া পজেটিভ ধরা পড়েছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র থানচি উপজেলায় ম্যালেরিয়া পজেটিভ ধরা পড়েছে ৭শ ৬১ জনের। এদের বেশিরভাগকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, প্রতি বছর মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাস ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা যায়। গত জুন মাস পর্যন্ত পুরো জেলায় প্রায় আড়াই হাজার জনের কাছে ম্যালেরিয়া রোগ সনাক্ত করা হয়েছে। এদের সবাইকে সেবা দেওয়া হয়েছে। ব্র্যাক ও সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও রোগীরা ক্লিনিক ও ফার্মেসিগুলোতে ম্যালেরিয়া চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এই কারণে ব্র্যাক ও সরকারি তথ্যের বাইরেও আরো বেশি সংখ্যক ম্যালেরিয়া রোগী থাকার সম্ভাবনার কথা জানান কর্মকর্তারা।

এদিকে সূত্র জানায়, রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো মেডিকেল টিম ওই এলাকায় না পৌছানোর কারনে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন চিকিৎসকও নেই। চিকিৎসক ছাড়াই তিনমাস ধরে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

ব্র্যাকের বান্দরবান জেলা ম্যানেজার শামীম গাজী বলেন, ২০১১ সালে ব্র্যাকের মশারী বিতরণ করা হয়। বিতরণ করা মশারীর মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। মশারীর কার্যকারীতা কমে যাওয়া, সচেতনতার অভাব এবং মাঝে মধ্যে বৃষ্টি ও রোদের কারণে মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্রাউল হাসান বলেন, রোববার ও সোমবার এই দুইদিনে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে দুই শিশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন। তবে ১২জন মারা গিয়েছে এমন তথ্য তার কাছে নেই বলে জানান।  তিনি আরও বলেন, গত দুই মাস আগে থেকেই থানচি এলাকায় ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। সদর এলাকায় এর প্রার্দুভাব কমানো গেলেও দুর্গম রেমাক্রি ও তিন্দু এলাকায় রয়ে গেছে। দুর্গম হওয়ার কারণে এবং চিকিৎসক না থাকায় কোনো মেডিকেল টিম পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ওই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। সংকট সমাধানে বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

থানচি উপজেলা পরিষদ চেয়রম্যান ক্যহ্লাচিং মার্মা, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সদর, রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে গত ৩০ দিনে ম্যালেরিয়া ও  টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে। এরা হলো, উথোয়াইচিং মারমা (৫) ও চহ্লাপ্রু মারমা (৯)।

সিভিল সার্জন মং তে ঝ রাখাই থানচি উপজেলায় চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, চিকিৎসক পাঠানো হলেও কেউ থাকতে চায় না। জোর করে একজন চিকিৎসককে পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যে জায়গায় ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে সেবা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিভিল সার্জনের মতে ব্র্যাকের মশারী গুলোর মেয়াদ তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আস্তে আস্তে এর কার্যকারীতা কমতে থাকে।

–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত