বাংলাদেশকে স্বনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে রাঙামাটির কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)কে আরো উন্নত এবং আধুনিক কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটি।
বুধবার কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিলের পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
তিনি কর্ণফুলী পেপার মিল কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দিক পরিদর্শন করেন এবং মিলেরর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কর্ণফুলী ভবনে কেপিএমপি বিসিএইসি ও শিল্পমন্ত্রণায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এসময় রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, রাঙামাটি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংসুপ্রু চৌধুুরী, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুদত্ত চাকমা, শিল্প মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব জিয়াউর রহমান খান,পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ নুরুল হাদী, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্হায়ী কমিটির সচিব এ কিউ এম নাছির উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম হুমায়ন কবির, বিসিআইসির পরিচালক(উৎপাদন ও গবেষণা ) মোঃ শাহীন কামাল, উদ্ধর্তন মহাব্যবস্থাপক( উৎপাদন) মোঃ আসাদুর রহমান টিপু, বিসিআইসি`র সিবিএ নেতা হাদি, জেলা পরিষদ সদস্য সাত্বনা চাকমা,কেপিএমের ব্যবস্হাপনা পরিচালক ডঃ এম এম এ কাদের, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, কেপিএম সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনিছুর রহমানসহ মিলের সকল বিভাগীয় প্রধানগণ, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্হিত ছিলেন। পরে সংসদীয় কমিটি কেপিএম মিলের বাঁশকেন্দ্র,বিটার হাউজ,মেশিন হাউজ,ফিনিশিং শাখা ও অন্যান্য প্লান্ট পরিদর্শন করেন। পরে চন্দ্রঘোনা কেপিএম গেস্ট হাউসে কেপিএমকে কিভাবে লাভজনক করা যায়, এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংসদ উষাতন তালুকদারের একান্ত সহকারী এম আর হোসাইন জহির।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির বলেছেন, কেপিএমকে আবারও লাভজনক করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। ইতিমধ্যে বিসিআইসির মাধ্যমে সরকার কেপিএমের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। মিলে বর্তমানে যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে তা সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। মৃত প্রায় এই মিলকে কিভাবে সচল করা যায় তা স্থায়ী কমিটির আলোচনায় তুলে ধরে তার সঠিক সমাধানের প্রচেষ্টা করা হবে। আমরা এই মিলের পুনঃগঠন চাই,মিলকে সচল দেখতে চাই। আমাদের দেশের কাগজের ঘাটতি পূরণে কেপিএম অতীতে যেমন ভুমিকা রেখেছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও সভ্যতার ও স্হানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে এই মিল ভুমিকা রাখবে। বিশ্ব বাজারের সাথে টিকে থাকার জন্য আমরা কেপিএমকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে।
উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই পেপার মিলটি অতীতে যেমন এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও লোকসান কাটিয়ে উঠে আবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে কেপিএম প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৫৩ সালে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে কেপিএমের মালিকানা হস্তান্তরিত হয় তৎকালীন দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আহমেদ দাউদের নিকট। মিলে কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ট্রপিক্যাল হার্ডউড,বাঁশ,পুরাতন কাগজ, পুরাতন করোটেড কার্টুন ও আমদানীকৃত পাল্প। এসবের মধ্যে কাঁচামাল বাঁশের প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে কারখানাটি স্হাপন করা হয়। বাঁশের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য এর পাশাপাশি বনবিভাগের বনায়নকৃত পাপ্লউড ব্যবহৃত হতো।
কেপিএমের ৩টি মেশিনের মধ্যে ২টি মেশিনে সাদা কাগজ, ১টিতে বাদামী ও অন্যান্য রঙিন কাগজ উৎপাদিত হয়ে থাকে।এছাড়া,সার্টিফিকেট, ডুপ্লিকেটিং,সিমপ্লেক্স,এজুর লেইড ও টাইপ রাইটিং ম্যানিকোল্ড জাতীয় কাগজ করোটেড বোর্ড, কার্টুন, বিটুমিন পেপার, গামটেপ এবং ওয়াক্স কোটেড পেপার উৎপাদিত হতো। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে আর দেনার দায়ে কেপিএম বর্তমানে মারাত্বক অর্থ সংকটে পড়েছে।
প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার একর নিজস্ব জায়গা রয়েছে কেপিএমের। একারণে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক কর্মসংস্হানের সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত পাহাড়ের শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তির ভূমিকায় ছিল কেপিএম।এমিলে শুরুতে ৩টি মেশিনে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১১০ থেকে ১৩০ মেট্টিক টন। বর্তমানে জরাজীর্ণ এই মিলে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ মেট্টিক টন কাগজ। এদিকে, বিভিন্ন ঠিকাদার, কাঁচামাল সরবরাহকারী, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক,কর্মচারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ লোকসানজনিত কারণে কেপিএম বর্তমানে প্রায় ৭শ` কোটি টাকা দেনারদায়ে জর্জরিত।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.