পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামসহ ৮ পাহাড়ি সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, পাহাড়িদের জমিতে বাঙালি সেটলারদের পুনর্বাসন করা হলে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না এবং তার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন আরও বলেন. দীঘিনালার বাবুছড়া ও বাঘাইছড়ির সাজেকে ৩০ হাজার বাঙালি সেটলার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য রাঙামাটির কাউখালিসহ বিভিন্ন উপজেলায় ফরম পূরণ করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। শুক্রবার ৮ গণতান্ত্রিক সংগঠন সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা মাইকেল চাকমার স্বাক্ষতিএক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষকারী অন্যান্য সংগঠনগুলো নেতৃবৃন্দ হলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা(২), সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সংগঠক কাজলী ত্রিপুরা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের সদস্য সচিব আনন্দ প্রকাশ চাকমা। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে আরও জানান, “পুর্ণবাসন জোন ভিত্তিক তথ্য তালিকা” শিরোনামে একটি ফরমে পুনর্বাসনে ইচ্ছুক সেটলারদের কাছ থেকে চৌদ্দটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। যেমন, পরিবার প্রধানের নাম, পিতার নাম, লোকসংখ্যা; সরকারীভাবে ৫ একর জমি বন্দোবস্ত পেয়েছিল কিনা, আগমন ভাতা আড়াই হাজার টাকা পেয়েছিল কিনা, দুই বান্ডিল ঢেউটিন পেয়েছিল কিনা, একজোড়া হালের গরু অথবা ১৫শ টাকা পেয়েছিল কিনা, হর্টিকালচার লোন দশ হাজার টাকা পেয়েছিল কিনা, হাজি ক্যাম্পের কার্ড নং যদি থাকে তার উল্লেখখ, তার নামে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত জমি বিক্রি, বন্ধক অথবা অন্য কোনভাবে হস্তান্তরিত হয়ে থাকলে তার উল্লেখ, তার নামে গুচ্ছগ্রাম রেশন কার্ড যদি থাকে তার নম্বর, গুচ্ছগ্রামের নাম ও কার্ড নম্বরসহ তার রেশন কার্ড নতুন, পুরাতন, বাতিল, বন্ধক, বিক্রি ও জবরদখল আছে কিনা; মাসিক ভাতা ৩শ টাকা করে পাচ্ছেন কিনা, গৃহ নির্মাণ বাবদ দেড় হাজার টাকা বুঝে পেয়েছে কিনা, বর্তমানে কোন খাস জায়গায় বাড়ি বসত, বাগান, চাষাবাদে দখলে থাকিলে তার পরিমাণ, দাগ অথবা চৌহদ্দি ও মৌজা নম্বর উল্লেখ এবং তার নামে কোন বন্দোবস্ত মামলা রজু হয়েছে কিনা – হয়ে থাকলে মামলা ও মৌজা নম্বর। ফরমটি পূরণ করার পর পরিবার প্রধানের স্বাক্ষর অথবা টিপসহি ও সনাক্তকারী গ্রুপ লিডারের স্বাক্ষর দিতে হবে এবং ফরমে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “সুপ্রীম কোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন মামলা নং – ৬৩২৯/২০০১”। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, কাউখালিতে পাঁচ হাজার পরিবারের কোটা নির্দিষ্ট করা হলেও আজ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার সেটলার পরিবার ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। ফরম জমা নেয়ার সময় গ্রুপ লিডাররা প্রতি সেটলার পরিবারের কাছ থেকে ৬শ টাকা করে নিচ্ছে। পাহাড়িদের জমিতে এই বিপুল সংখ্যক সেটলার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়,পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য একটি বিশেষ মহল নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। নতুন করে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ সেই প্রচেষ্টারই অংশ। বিবৃতিতে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন পাহাড়িদের জমিতে বাঙালি সেটলারদের পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কোনভাবেই মেনে নেবে না এবং তার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দুই ফৌজি শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসা সেটলারদের সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসনের দাবি জানান। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ভারত-প্রত্যাগত ও আভ্যন্তরীণ পাহাড়ি শরণার্থীদের কাছে তাদের নিজ জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার একদিকে পাহাড়িদের পুনর্বাসনের পরিবর্তে তাদের নিজেদের জায়গা জমি থেকে উৎখাত করছে। অন্যদিকে বাঙালি সেটলারদেরকে পাহাড়িদের জমিতে পুনর্বাসন করছে। তারা সরকারের এই ঘৃন্য বর্ণবাদী নীতির নিন্দা জানান এবং বলেন, দরিদ্র বাঙালি সেটলারদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পরিণাম কখনোই শুভ হবে না।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.