খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী গনধর্ষণ এবং লামায় ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচার দাবিতে ঢাকায় মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্যে দেন ঐক্য ন্যাপ-এর সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য জান্নাত এ ফেরদৌসী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জাহিদ হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জনা গোস্বামী, কাপেং ফাউন্ডেশন থেকে সোহেল হাজং, গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকী আক্তার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নিপুন ত্রিপুরাসহ এএলআরডি, ব্লাস্ট, আদিবাসী ফোরাম, গারো স্টুডেন্টস ফেডারেশন, মাদল ও অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি মনিরা ত্রিপুরা। মানববন্ধনের মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সমাবেশে বর্ষীয়ান নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে চলেছে। আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এসব ঘটনায় সমগ্র দেশ আজ উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী মানুষের ওপর এতো মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটছে কিন্তু রাষ্ট্র কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। রাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘণের এ বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করছে কিংবা রাষ্ট্র এ পাহাড়ি আদিবাসী মানুষদের দেখতে পায় না। কোন সুষ্ঠবিচার না হওয়ার ফলে দেশে সহিসংসতার ঘটনা বেড়েই চলছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জাহিদ হাসান সহিংসতা ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারের পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
কাপেং ফাউন্ডেশনের সদস্য সোহেল হাজং বলেন, এবছরের জুন পর্যন্ত সারাদেশে আদিবাসী নারী ও কন্যাদের প্রতি সহিংসতামূলক ১৮ থেকে ২০টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পাহাড় ও সমতলের প্রায় ২৫ জন আদিবাসী নারী অথবা কিশোরী সহিংসতার শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রের চলমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আদিবাসীদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখার কারণেই নারীদের প্রতি এসব সংহিসংতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি এসব প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
লাকী আক্তার বলেন, ‘রাষ্ট্র নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটনার বিচারে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তারা আরো সহিংসতাকারীদের সাহায্য করছে।’ তিনি সহিংসতা প্রতিরোধে এক সংঘবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী গনধর্ষণ এবং লামায় ধর্ষণের পর হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, গেল ২১ জুন ২০১৮ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কে একজন ত্রিপুরা আদিবাসী কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়। ওই দিনই পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে যার মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাকিরা পলাতক রয়েছে। আদালত আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, গেল ১৭ জুন বান্দরবানের লামায় নিজ বাড়িতে এক আদিবাসী মারমা (১৯)তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এই তরুণীকে। নিহতের আত্মীয়দের অভিযোগ, ধর্ষণের পরে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে। কারণ তার গলায় ছোপ ছোপ কালো দাগ আছে এবং মেয়ের গায়ের কাপড় খোলা ছিল এবং তার শরীরে ধর্ষণের আলামতও দেখা গিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মূলত বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে এধরনের ঘটনা বারংবার ঘটছে বলে উল্লেথ করে তিনি ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবীগুলো হল খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী গণধর্ষণ ও লামায় ধর্ষণের পর হত্যায় অভিযুক্ত সকল অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ঘটনার শিকার উভয় আদিবাসী পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তা প্রদান,আদিবাসী নারীসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা,পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের অধীনে পার্বত্য নারীদের সকল ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে একটি বিশেষ সেল গঠন এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূণার্ঙ্গ বাস্তবায়ন করা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.