২০১৪ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ করেছে ইউপিডিএফ

Published: 02 Jan 2015   Friday   

২০১৪ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল। এতে দাবি করা হয়েছে গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, আইন-শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, বিনা বিচারে আটক, শারিরীক নির্যাতন, নারী ধর্ষণ ও ভূমি বেদখলসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।  এছাড়া জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপের নিহত হয়েছে ১৫ জন।

শুক্রবার ইউপিডিএফের তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমার স্বাক্ষরিত এ প্রেস বার্তায় ২০১৪ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রেস বার্তায় মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, গত বছর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে দুটি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ও বেতছড়িতে পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলায় কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়িতে পাহাড়িদের ৩টি গ্রামে হামলা, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ৫০টি বসতবাড়ি, ৭টি দোকান ও ১টি ক্লাবে অগ্নিসংযোগ, বৌদ্ধ বিহারে হামলা, বুদ্ধমূর্তি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।

এছাড়া রাঙামাটি ও বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন) এর সদস্যদের উপর হামলা হয়। এতে ইলিরা দেওয়ান ও ড. ইফতেখারুজ্জামান সহ অনেকে আহত হন। অপর এক ঘটনায় কমিশনের কো-অর্ডিনেটর হানা শামস আহমেদ ব্যক্তিগত সফরে বান্দরবান গেলে তার উপরও উগ্রবাদী সেটলাররা হামলা চালায়। এসব ঘটনা ছাড়াও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে আরো কমপক্ষে ৬টি ছোটখাটো হামলার ঘটনা ঘটে।

এতে দাবি করা হয়, গত বছর আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন ৪৬ জন। এর মধ্যে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ জন, নিরীহ গ্রামবাসী গ্রেফতার হয়েছেন ২৬ জন এবং জেএসএস (এমএন লারমা)-এর ৩ কর্মী -সমর্থককে আটক করা হয়। এছাড়া আইন-শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে শারিরীক নির্যাতনে তিমির বরণ চাকমা ওরফে দুরন নামের জেএসএস এমএন লারমা দলের এক সদস্যের মৃত্যু হয়। অপরদিকে, একটি বৌদ্ধ মন্দিরসহ কমপক্ষে ৫৫টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং জনপ্রতিনিধি সহ বেশ কয়েকজন হেনস্থা ও হয়রানির শিকার হন। এ সময় ১৫ জন নিরীহ ব্যক্তি শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন।

প্রেস আরও দাবি করা হয়, জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ইউপিডিএফ কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন ১৩ জন এবং জেএসএস (এমএন লারমা)-এর নিহত হন ২জন। নিহতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। এছাড়া সন্তু লারমা গ্রুপের হাতে নিরীহ গ্রামবাসী অপহৃত হয়েছেন ২ জন ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন ৫ জন। অন্যদিকে, জেএসএস এমএন লারমা দলের ১ সদস্য আহত এবং অপর এক সদস্য হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হন। এছাড়া বোরকা পার্র্টির সন্ত্রাসী কর্তৃক ৮ নিরীহ গ্রামবাসী অপহরণের শিকার হয়েছেন।

গত বছর পাহাড়ি নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ৪ শিশু সহ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন। ধর্ষণের পর খুন হন ৪ জন। ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হন ১৫ জন। অপহৃত হন ১ জন ও অপহরণ চেষ্টার শিকার হন অপর একজন। এদের মধ্যে ২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দ্বারা ও ৩২ জন সেটলার বাঙালি কর্তৃক ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া রাঙামাটি পর্যটন এলাকা ও বিলাইছড়ির বহলতলী এলাকার কাপ্তাই লেক থেকে দুই পাহাড়ি নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটে। খাগড়াছড়ির বাবুছড়ায় বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য জোরপূর্বক ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে ২১টি পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়। বর্তমানে তারা জায়গা-জমি হারিয়ে শরণার্থীর মতো মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অপরদিকে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে বিজিবির অপর একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের নামে শ্মশানের জমিসহ পাহাড়িদের মালিকানাধীন আনুমানিক ৫০ একর জমি বেদখল করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া সেটলার কর্তৃক বেশ কয়েকটি ভূমি বেদখল প্রচেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে বলে প্রেস বার্তায় দাবি করা হয়েছে।

 

–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত