বুধবার রাজধানীতে রাঙামাটির লংগদুর অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলার এক বছর, গৃহনির্মাণসহ সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাপেং ফাউন্ডেশনের সদস্য সোহেল হাজং এর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, ঢাকার বাংলা মটরস্থ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, আইইডি, জনউদ্যোগ ও কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগ-এর আহ্বায়ক ডা. মুশতাক হোসেন। অতিথি ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচায, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, আইইডি-এর নির্বাহী পরিচালক, নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রুং প্রমুখ।
তারিক হোসেন মিঠুল-এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্যে রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ কুলিন মিত্র চাকমা, চেয়ারম্যান, ৭ নং লংগদু ইউনিয়ন পরিষদ, মঙ্গল কান্তি চাকমা, চেয়ারম্যান, ১ নং আটরকছড়া ইউনিয়ন, মানিক কুমার চাকমা, হেডম্যান, ২৪ নং মাইনীমুখ মৌজা, নিহত গুণমালা চাকমার মেয়ে কালাসোনা চাকমা সভায় উপস্থিত থেকে তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত তোলে ধরেন।
লংগদুর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে একবছরে সরকারের প্রতিশ্রুতি ও বর্তমান অবস্থার বিবরণী নিয়ে বক্তব্য তোলে ধরেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।
আলোচনা সভায় তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারসমূহকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুসারে আরও ৩ বৎসরের জন্য রেশন প্রদানসহ দ্রুত বাড়িঘর নির্মাণের মাধ্যমে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;হামলার পর পাহাড়িদের নামে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ, দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, লংগদুতে ১৯৮৯ সালে যে সাম্প্রদায়িক হামলার ফলে ৩০ জন আদিবাসীকে মেরে ফেলা হলো এবং অনেকগুলো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হলো তার বিচার যদি ঠিকভাবে হতো তাহলে ২৮ বছর পর ঐ লংগদুতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। তিনি এইসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীদের অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গতভাবে পূনর্বাসনের দাবি জানান।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, লংগদু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, রামু এসব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার সবই একই সূত্রে গাঁথা। এগুলো এখন জাতীয় কলংকে রূপ নিয়েছে। এদেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া এসব হত্যার বিচার না হওয়ার কারণ- সেখানে এখনও সেনা শাসন বন্ধ হয়নি এবং পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরো বলেন, চুক্তি যারা করেছে, সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি উভয়েই যদি একসাথে পার্বত্য তিন জেলায় চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য নেমে পড়েন তাহলে এ চুক্তি বাস্তবায়নে কোন বাধা থাকবে না।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং লংগদুর এ ঘটনার উল্লেগ করে বলেন, একটি উন্নত, সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সাথে এমন আচরণ করতে পারে কীনা যা পাহাড়ি-আদিবাসীদের সাথে করা হয়েছে। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী। তাদের ওপর বঞ্চনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘণ রাষ্ট্র দেখে কী না দেখলেও তা উপলব্ধি করে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.