জিম্মি অবস্থা থাকাকালীন অকথ্য মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি

Published: 29 Apr 2018   Sunday   

জিম্মি অবস্থা থাকাকালীন অকথ্য মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো কিনা নিশ্চিত ছিলাম না। অপহরণ ছিল পরিকল্পিত, নব্য মুখোশ বাহিনী ও এমএন লারমা দলের একটি গোষ্ঠী মিলিতভাবে এ ধরনের ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে।

 

অপহরনের মুক্তির দশ দিন পর রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা এসব কথা বলেন।


হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নীতি শোভা চাকমার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বার্তায় বলা হয়,১৯ নারী-ছাত্র-যুব সংগঠনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা। এসময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, নারী সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল মরিয়ম, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদউস, বিপ্লবী নারী ফোরামের সদস্য আমেনা আক্তার, বিপ্লবী নারী মুক্তির আহ্বায়ক নাসিমা নাজনীন, সিপিবি নারী সেলের সদস্য জলি তালুকদার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, ছাত্র ঐক্য ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এমএম পারভেজ লেলিন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য হযরত আলী, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা প্রমূখ।


১৯ সংগঠনের পক্ষে সংক্ষিপ্ত এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিরূপা চাকমা। এরপর মন্টি চাকমা তাদের ৩৩ দিনের জিম্মি থাকার দুঃসহ অভিজ্ঞতা লিখিতভাবে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।


মন্টি চাকমা বন্দি থাকাকালীন সেই দুঃসহ দিগুলোর স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ১৮ মার্চ সকালে নব্য মুখোশবাহিনীরা হঠাৎ ছাত্রদের মেসঘর লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করে। এরপর সবাই দৌড়ে পালাতে থাকে। তখন অন্যদের মতো তিনিও সেখান থেকে পালিয়ে একটা শৌচাগারে আশ্রয় নেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে দেখে ফেললে বের হয়ে আসতে বলে।তিনি আসতে না চাইলে আমাকে গুলি করে মারার ভয় দেখায়। এসময় সেখানে আরেকজন সন্ত্রাসী গিয়ে তাকে পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর করে। পরে ছাত্রদের মেস ঘরে এনে উঠোনের একটা গাছে বেঁধে রাখা হয়। এরপর দয়াসোনা চাকমাকেও সেখানে আনা হয়। পরে দুজনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়।


তিনি আরো বলেন, অপহরনের প্রথম দিন নানিয়ারচরে গুল্যাছড়ি নামক গ্রামে এক জৈনক পাহাড়ির বাড়িতে তাদের রাখা হয়। সেখানে দুইদিন ধরে মুখোশবাহিনীর সর্দার তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা আমাদের সাথে খুব খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে ও ধর্ষণের হুমকি দেয়। তিনি এসময় তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন ‘আগে তোমাকে মোবাইল ফোন করে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছি, এবার তা বাস্তবায়ন করব’। পরে ২০ মার্চ একটি ইঞ্জিন বোটে করে নানিয়ারচর উপজেলা থেকে মহালছড়ি উপজেলায় জেএসএস সংস্কারপন্থীদের ঘাঁটি এলাকার মুবাছড়ি নামক এলাকায় ধনপুদি বাজারে সশস্ত্র প্রহরায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রায় দুই দিন দুই রাত পায়ে হেঁটে দিঘীনালা ও লংগদু সীমান্তবর্তী এলাকা মেরুং-এ নিয়ে জায়গা বদল করে কয়েকটি বাড়িতে জিম্মি করে রাখা হয়।


আন্দোলনের চাপেই তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে মন্টি চাকমা আরো বলেন, ছেড়ে দেয়ার আগে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে তারা হাস্যকর নাটক করে, তাদের দিয়ে ভিডিও রেকর্ডিং করিয়ে তাদের সপক্ষে কথা বলতে বাধ্য করায়। তাদের সাথে ছবিও তুলেছেন।


তিনি বলেন, মূলত তিনটি শর্ত দিয়ে অভিভাবক ও জামিনদারের হাতে তাদেরছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কোন কোন মিডিয়ায় মুক্তিপণ দেয়ার কথা বলা হলেও, তা সত্য নয়। শর্তগুলো হল রাজনীতি করা যাবে না, নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার বর্মার অনুমতি ছাড়া গ্রামের বাইরে যেতে পারবে না ও অপহরণের বিষয়ে কারোর কাছে মুখ খোলা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ হলে তাদের ও অভিভাবকদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।


মন্টি চাকমা তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, তিনি দেশবাসীর নিকট সত্য ঘটনা তুলে ধরায় তার পরিবারের উপর সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়েছে। তার বাবা ও বড় ভাইকে নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তারা এখন পালিয়ে রয়েছেন। তার পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্মা তাকে যেখানে পাবে সেখানে মেরে ফেলবে বলে আমার মা’কে ফোন করে হুমকি দিয়েছে। আমার ও দয়াসোনার পরিবার চরম নিরাপত্তহীনতায় রয়েছে।


সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৯ নারী-ছাত্র-যুব সংগঠনের পক্ষে থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হল অনতিবিলম্বে অপহরণকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, মন্টি ও দয়াসোনা চাকমার পরিবারের নিরাপত্তা বিধান, অপহরণকারী ও তাদের মদদ দাতাদের গ্রেফতার ও বিচার,পাহাড় ও সমতলে সংঘটিত সকল ধর্ষণ-গুম-খুন-অপহরণের বিচারসহ ইত্যাদি।


সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৯ সংগঠনসমূহের মধ্যে ঐক্য বজায় এবং পাহাড়-সমতলে নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকাসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা না হলে আবারো একযোগে রাজপথে নামার ও যৌথ কর্মসূচী ঘোষণা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত