আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাকে ধারন করে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মাতৃভাষায় কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) আয়োজনে ঢাবি শাখার উদ্যোগে মাতৃভাষায় কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র ঢাবি শাখার সভাপতি অমর শান্তি চাকমা। আলোচনা সভায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ব^বিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সিনিয়র শিক্ষার্থী অর্পন ত্রিপুরা, সৌরভ চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির সভাপতি কিংশুক চাকমা এবং পিসিপি ঢাবি শাখার সিনিয়র সদস্য জিনেট চাকমা, ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জ্ঞানজ্যোতি চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিসিপি ঢাবি শাখার সাধারন সম্পাদক অরুন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
অনুষ্ঠানে পাহাড় ও সমতলের ভিন্ন ভাষাভাষী ১০ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আদিবাসী শিক্ষাথীরা। সমাপনি বক্তব্যে রাখেন পিসিপি ঢাবি শাখার সভাপতি অমরশান্তি চাকমা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ভাষা একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রধান মাধ্যম। ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে সেই ভাষার জাতির বিলুপ্তি ঘটার সামিল। বিশ্বায়নের এই যুগে নব্য উপনিবেশিক কায়দায় বৃহত্তর জাতি ক্ষমতার মাধ্যমে তাদের ভাষা ছোট জাতি গোষ্ঠীগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়ে শাসন ও শোষনের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করছে । এই একই মেকানিজমের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষাও আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। অস্তিত্ব সংকটের এই পর্যায়ে তাই আমাদের প্রথমেই স্ব-স্ব মাতৃভাষাকে রক্ষা করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতিতে সকল আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখনো সকল আদিবাসীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করেনি। বরং যে ৫ টি আদিবাসী ভাষায় প্রাক- প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেগুলোতেও ভুলে ভরা তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতেও সকল জুম্ম জনগোষ্ঠীর স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোও বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এ বিষয়টিও অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। উপরন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোধিত হয়ে শাসক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, আদিবাসী নারী ধর্ষণ, ভাষাগত, সংস্কৃতিগত আগ্রাসন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন ও সকল আদিবাসীদের স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করে সকল আদিবাসীদের ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিগুলো সংরক্ষনের জোর দাবী জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.