বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় তিনটি ইট ভাটায় হাজার হাজার মণ লাকড়ি মজুদ করে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে রাত-দিন। ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’ এর আইন অমান্য করে তিনটি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ‘সংরক্ষিত বনভুমির ২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে’। অভিযোগ রয়েছে বন থেকেই কাটা হচ্ছে ইট ভাটার লাকড়ি। এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের নানা প্রজাতির বৃক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব পালংপাড়া ও আমতলী এলাকায় ২টি ভাটায় ড্রামসিট চিমনী দিয়ে মাসাদিককাল থেকে কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। অপরদিকে, তারাবুনিয়ায় আরেকটি ইটের ভাটায়ও কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। জ্বালানী ও ইট পরিবহনে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙ্গে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ধুলায় একাকার হয়ে সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ইটের ভাটায় অবৈধভাবে আহরিত লাকড়ির যোগান দিতে গেল বছর থেকে গড়ে উঠেছে নানান সমিতি।
এদিকে, চলতি মাসে উপজেলা পরিবেশ ও বন কমিটির সভায় ব্রিক ফিল গুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, এ আইনের ৪ ধারায় উলেক্ষ আছে ‘জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচা মাল ব্যবহার করা যাবে না’। এছাড়াও ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করা যাবে না’ মর্মে আইনে উল্লেখ রয়েছে। আইন অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় ইট ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্যকোন স্থানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের ৮ ধরার ৩ (খ) উপধারায় উলেক্ষ আছে, ‘বিভাগীয় বনকর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে ২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না’।
এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না’। এ আইন অমান্য করলে ‘অনধিক ৩ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডিত হইবেন’ মর্মে এ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ইতঃপূর্বে একটি ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে এখানকার ইটভাটা গুলো গড়ে তোলা হয়নি। প্রয়োজনে শীঘ্রই আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে আমি অভিযান পরিচালনা করার জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি। এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.