৭৩টি ত্রিপুরা পরিবার। কালের বিবর্তনে ভুলে গেছে নিজস্ব মাতৃভাষা। কথা বলে চাকমা ভাষার সাথে মিল রেখে কিছুটা বিকৃত করে। যেন এক নতুন ভাষায়। এটি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার পানছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আদি ত্রিপুরা পাড়ার। শুধু এ আদি ত্রিপুরা পাড়ার নয়, উপজেলার টিএন্ডটি টিলার আদি ত্রিপুরা পাড়া, কালানাল ত্রিপরা পাড়া, লোগাং ইউনিয়নের আমতুলির আদি ত্রিপুরারা সম্প্রদায়রাও একই ভাষায় কথা বলেন।
কখন থেকে মাতৃভাষাটি হারিয়ে ফেলেছে তা কেউ বলতে পারে না। এসব ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের আদি নিবাস রাঙামাটি। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারণে তারা উদ্ভাস্তু হয়। বসটি গড়ে তোলে উপজেলার আদি ত্রিপুরা পাড়ায়, উপজেলার টিএন্ডটি টিলা, কালানাল ত্রিপরা পাড়া, লোগাং ইউনিয়নের আমতুলি। নিজেকে ত্রিপুরা জাতি বলে পরিচয় দিলেও মাতৃভাষা হারিয়েছে তারা। এসব ত্রিপুরাগুলো অন্যান্য ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মতো সনাতন( হিন্দু ধর্ম) ধর্ম।
প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী অভি ত্রিপুরা, শান্ত ত্রিপুরা জানায়, ত্রিপুরা পরিচয় দিলেও তারা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে না। বিদ্যালয়েও মাতৃভাষায় পড়ানো হয় না।
পূর্ণরানী ত্রিপুরা, নিঝুংগো ত্রিপুরা, অনিতা ত্রিপুরা বলেন,শুধু তারা নয় তাদের দাদা-দাদিরাও ত্রিপুরা ভাষায় কথা বলতে পারেন না। সবাই চাকমা ভাষার সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। তাই তারা পারেন না।
আদি ত্রিপুরা নিবাসী পানছড়ি সদর ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সুকময় চাকমা বলেন, সব আদি ত্রিপুরারা চাকমার ভাষার সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। তারা মাতৃভাষা হারিয়েছেন।
পানছড়ি ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যা ও আদি ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা হিরামতি বড়–য়া বলেন,আদি ত্রিপুরা পাড়ার আদি ত্রিপুরারা কেউ আর ককবরক ভাষায়( ত্রিপুরা ভাষা) কথা বলতে পারেন না। তবে পরিচয় দেয় ত্রিপুরা জাতি হিসেবে। এ গ্রামের অধিকাংশ ত্রিপুরা পরিবার গরীব, তাদের কোনো জায়গা জমি নেই। প্রায় সবাই দিন মজুর করে খেয়ে না খেয়ে থাকেন। বসতবাড়ী করেছে আত্মীয়-স্বজনের জায়গায়। তাই তাদের সব সময় মাথা নিচু করে থাকতে হয়। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে অধিকাংশ শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। স্কুলে গেলেও ৪,৫ শ্রেণির পর ঝরে পড়ে।
তিনি আদি ত্রিপুরা পাড়ায় একটি ত্রিপুরা শিক্ষা গণকেন্দ্র স্থাপন করে দেওয়ার জন্য সচেতন মহলের কাছে দাবি করে জানান, ফলে আদি ত্রিপুরারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারবে আর সচেতন হয়ে আস্তে আস্তে শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে।
আদি ত্রিপুরা পাড়ায় বাস করেন খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সহকারী সচিব খগেন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, চর্চা করলে পৃথিবীর যেকোনো ভাষা আয়ত্বে আনা যায়। চর্চার অভাবে তাঁরা মাতৃভাষা ‘ককবরক’ ভাষা হারিয়েছে। বাড়ীতে নিয়মিত মাতৃভাষা চর্চা করলে তারা মাতৃভাষা ফিরে পেতে পারে। কিন্তু তারা তো চর্চা করেন না।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য খগেশ্বর ত্রিপুরা বলেন,ত্রিপুরা ভাষা শিখার আগ্রহ থাকতে হবে এবং নিজেদের উদ্যোগে এ ভাষা শিখতে হবে। ককবরক ভাষার অভিধান পড়তে হবে। আর যারা ককবরক ভাষা বলতে পারে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এতেই ককবরক ভাষা বলতে পারবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.