কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে মাল্টার আবাদে এ সাফল্য এলাকার কৃষকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।
উৎসাহী কৃষকরা মাল্টার চাষে ঝুঁকছে। পরিকল্পিত বাগান করে মাল্টার আবাদে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা জেগেছে কৃষকদের মাঝে। তাই বীজ, চারা কিংবা কলম সংগ্রহের জন্য কৃষকরা ছুটছে রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। কৃষকের এ আগ্রহ কাপ্তাইয়ের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিদেশি রসালো ফল মাল্টার দেশীয় চাহিদার সিংহভাগই নির্ভর করে আমদানির উপর। এ অঞ্চলে মাল্টার উৎপাদনে আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেন। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মাল্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পচন রোধের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত মাল্টার আবাদে ব্যাপক সাফল্যের প্রত্যাশা কৃষি বিজ্ঞানীদের। এ সাফল্যে স্থানীয়ভাবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা তাজা মাল্টা ফলের প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
মাল্টা ফলের চাহিদানুযায়ী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ যোগান দেয়া যাবে। রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণালব্ধ বারি মাল্টা-১ পাকলে আমদানিকৃত মাল্টার মত কমলা রং হয় না। এটি সবুজের উপর সামান্য বাদামি রঙ ধারণ করে। তবে আমদানিকৃত বিদেশি মাল্টা অপেক্ষা রসালো ও সুমিষ্ট হয় এ মাল্টা। মিষ্টির ক্ষেত্রে বিদেশি মাল্টাতে টিএসএস এর পরিমাণ ৬ হলেও রাইখালীতে উদ্ভাবিত মাল্টাতে টিএসএসের পরিমাণ ৮। পুষ্টিগুণও অপেক্ষাকৃত বেশি। রুচিপূর্ণ এই জাতের মাল্টা এখন বাজার দখল করতে যাচ্ছে। গত বছর গবেষণা কেন্দ্রে ২০০টি গাছে প্রায় ৬০০০০ টি মাল্টা ধরেছে। ৫-৬ টি মাল্টাতে ১ কেজি হয়। স্থানীয়ভাবে এসব মাল্টা মাত্র ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বিদেশি মাল্টা ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কাপ্তাইয়ের কৃষি এবং কৃষকের আর্থিক সমৃদ্ধির পথে গতি সঞ্চার করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে মাল্টা ফলের দৃষ্টি নন্দন বাগান। অন্য বৃক্ষের নিছে ছায়াযুক্ত মাটিতেও মাল্টার প্রচুর ফলন হয়। রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণালব্ধ এই সাফল্যের হাত ধরে কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে মাল্টার আবাদে সাড়া জাগিয়েছে। এতে বিদেশি রসালো ফল মাল্টার আবাদে কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাব হোসেন জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ এর চাষাবাদের জন্য কাপ্তাইয়ের মাটি ও প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান। পাহাড়ি অঞ্চলে এর চাষে সফলতা অর্জিত হয়েছে। পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে এই বারি মাল্টার আবাদে ৪ বছরের প্রতিটি গাছে ৩০০ এরও বেশি মাল্টা ধরেছে। এতে এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষ খুবই খুশি।
ফলে কৃষকরা কলম সংগ্রহের জন্য গবেষণা কেন্দ্রে ছুটে আসছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কলম না থাকায় চলতি বছর বাগান সৃজনের জন্য কেন্দ্র থেকে ১২ জন কৃষকে মাথাপিছু ৫০টি মাল্টা গাছের কলম সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী বছর এর পরিমাণ কয়েকশ কৃষকের মাঝে কলম বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে এ মাল্টা চাষ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার কলম নেয়ার জন্য কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছে। যে হারে কৃষকেরা কলম সংগ্রহ করে বাগান সৃজন করছে তাতে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মাল্টা আমদানি করার প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান। এতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.