বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় ছাইঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান শহর থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে রোয়াংছড়ি উপজেলার ছাইঙ্গা এলাকায় ১৯৭৪ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৯৭৮ সালে সরকার বিদ্যলয়কে জাতীয়করণ করলেও আজও উন্নয়নের মুখ দেখেনি। এ বিদ্যলয়টি এলাকার একটি টিলার ওপর অবস্থিত ও টিনশেডের তৈরী। বাশের তৈরী এ টিনশেডের বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিন ধরে মেরামত না করায় ছাদ ভেঙ্গে পড়ছে এবং কোথাও কোথাও বাশের বেড়ায় পচন ধরেছে। ভাঁঙ্গা ছাদ ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে বাশ দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। তবে ২০০৯-১০ সালে এ টিনশেডের পাশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি পাকা ঘর নির্মান করা হয়। এতে একটি কক্ষে বসেন প্রধান শিক্ষক ও অন্য কক্ষটিতে বসেন শিক্ষকরা। পাশের কক্ষে চলে শিশু শ্রেনীর পাঠদান। এ বিদ্যালয়ে ৩শ শিক্ষার্থী রয়েছে ।
জানা যায়,সরকারের শিক্ষা সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ২০১৩ সালে চালু হয় ষষ্ঠ শ্রেনীর ক্লাস। পরের বছর সপ্তম। তারই ধারাবাহিকতায় এবার চালু হয়েছে অষ্টম শ্রেণী। তবে শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে পাকা ঘরে শিশু শ্রেণীর পাঠদান করার শেষ হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে পাঠদান দেয়া হয়। কিন্তু সপ্তম,অষ্টম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে খোলা আকাশের নিচে। ।
৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী হ্রমিউ মারমা জানায়, শীতকালে গাছ তলায় বসে লেখা পড়া সম্ভব হলেও গ্রীস্ম ও বর্ষাকালে ক্লাস করা সম্ভব হবে না। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ইউছুপ জানায়,শীত, বর্ষা, গরম অপেক্ষা করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ছি। এ বিদ্যালয়টি না থাকলে পঞ্চম শ্রেণীর পর লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হতো। বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করতে সরকারের প্রতি সে দাবি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনতি বড়ুয়া জানান,বর্তমানে শুস্ক মৌসুমের সময়টাতে হয়তো খোলা আকাশের নিচে পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বর্ষাকালে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান সম্ভব নয়। তিনি দ্রুত একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়লেও এখনো সরকার থেকে অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়নি। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৭২ জন। বিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জনই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হওয়ায় পাঠ দানে তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে ক্ষোভের সাথে জানান, তার বিদ্যালয়ের পাসের হার শতভাগ। ২০১৩ সালে জাতীয় গণিত প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ২০১২-২০১৪ পর্যন্ত শ্রেষ্ট বিদ্যালয় এবং জেলার শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিন যুগে বিদ্যালয়ের জন্য মাত্র ৫টি আলমিরা, একটি ইলেক্ট্রনিক পিয়ানো ও কিছু টেবিল-বেঞ্চ আর দুই কক্ষের একটি পাকা ঘর ছাড়া কোনো উন্নয়ন হয়নি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পূরবী চৌধুরী জানান, বান্দরবানে ২০১৩ সালে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উন্নতি করে আস্তে আস্তে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত করা হয়েছে। চলতি বছরে আরও ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উন্নতি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শুধু সরকারী বই দিয়ে থাকি। পরিচালনা ও দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোন তথ্য না দেয়ায় শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্পটি ঐসব বিদ্যালয়ে চালু করা সম্ভব হয়নি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.