পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে আশা জাগাচ্ছে বেসরকারী সংস্থাগুলো। শিক্ষার মূলধারার সাথে যুক্ত করার লক্ষে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে এরিমধ্যে প্রায় ১৬ হাজার শিশুর উন্নত শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়,ইউনিসেফ বেশ কয়েক দশক পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কাজ করলেও শিশুদের মধ্যে মাতৃভাষার চর্চা ও শিখনে খুব বেশী সফল হতে পারেনি। তবে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ স্থানীয় এনজিও ‘জাবারাং কল্যাণ সমিতি’ ২০০৬ সাল থেকে ‘মাল্টি ল্যাঙ্গুয়াল এডুকেশন (এমএলই)-র মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে মারমাদের ৭টি, ত্রিপুরাদের ১৫টি এবং চাকমাদের ২৭টি মাতৃভাষাভিত্তিক স্কুল চালিয়ে যাচ্ছে। উপানুষ্ঠানিক এসব বিদ্যালয় থেকে উর্ত্তীর্ন শিশুরা ২০০৭ সাল থেকে প্রচলিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ছে।
তবে বিগত ২০০৯ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার উপর প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত মাল্টিমিডিয়া ভার্সন তৈরি করলেও অর্থাভাবে সেটি বেশীদুর এগুতে পারেনি।
সূত্র মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ যৌথভাবে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর লক্ষে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্যাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদ হস্তান্তরিত হলেও প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী জনগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার বিষয়টি এখনো কার্যকরভাবে জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের অর্ন্তভুক্ত না থাকায় জেলা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছে না। তবে দাতা সংস্থা ‘সেভ দি চিলড্রেন’র অর্থায়নে ১ কোটি ৬১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬’শ ৬১ টাকা ব্যয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘জাবারাং কল্যান সমিতি’ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা শিশুর ক্ষমতায়ন প্রকল্প ২য় পর্যায়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ১’শ ৬টি পাড়ায় মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছিল। তবে এর বেশীর ভাগই এখন প্রকল্প উর্ত্তীন। এখনো পান্ডুলিপি প্রণীত হয়নি।
বেসরকারী এক গবেষনায় দেখা গেছে, পার্বত্য এলাকায় একসময় ভাষাগত সমস্যার কারণে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর থেকে ঝড়ে পড়তো। আর এটি রোধ করতে মাতৃভাষার উপ-আনুষ্ঠানিক স্কুলগুলো বেসরকারী উদ্যোগ বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের কারিকুলাম অনুযায়ী মাতৃভাষা শিক্ষাদান চালু হলে সরকারের অভীষ্ট শতভাগ অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৫টি মাতৃভাষা এনসিটিবি‘র কারিকলামে অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রনয়নসহ বই ছাপার কাজও প্রায় শেষের পথে। এজন্য বইয়ের পরিমান ও ছাত্র সংখ্যা পাঠানো হয়েছে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় পারদর্শী শিক্ষকদের তালিকা ঠিক করে তাদের প্রশিক্ষনের কাজ সহসাই শুরু হবে।
মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে ‘এনসিটিবি’র গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান,দেশের ৫টি চাকমা-মারমা-ত্রিপুরা, ওরাওসহ বেশ কটি জাতির সাদ্রি, গারো লেখক প্যানেল হয়েছে।
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’র উপ-পরিচালক শাহীন ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুদেরকে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য সংশোধিত দারিদ্র বিমোচনের জাতীয় কৌশল-২ অনুসারে কাজ করছে। যার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নৃ-গোষ্ঠি শিশুদের শিক্ষার মূলধারার সাথে যুক্ত করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১’শ ৯জন শিক্ষককে মাতৃভাষায় পাঠদানে দক্ষ করে তুলতে মৌলিক প্রশিক্ষণ ও ভাষা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা বলেন, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কারিকুলামে নিজ মাতৃভাষায় পাঠদানের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করলে জেলা পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.