আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুদশক পূর্তি। কিন্তু চুক্তির দুদশকেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যবাসীর মনে উদ্বেগ ও হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার পক্ষ থেকে চুক্তি বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে দাবী করেছে পার্বত্য চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮ ধারা পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকী ৯টি ধারা বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের এই দিনে(২ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি শর্ত মোতাবেক ১৯৯৮সালের ১০ফের্রুয়ারী থেকে ২৯ মার্চ পর্ষন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির্য(তৎকালীন সামরিক শাখার শান্তি বাহিনী) প্রায় দুই হাজার সদস্য মোট চার দফায় অস্ত্র জমাদানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
একাধিক সূত্র মতে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতির কারণে পাহাড়ের সাধারন মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে নানান হতাশা, ক্ষোভ ও সন্দেহ। কারন চুক্তি স্বাক্ষকারী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে এমন আশায় পাহাড়ের মানুষ আশান্বিত হলেও বর্তমান সরকারের ৯ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পক্তি কমিশনের আইনের সংশোধন ছাড়া চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপই নেয়নি বলে মনে করছেন পাহাড়ের সাধারন মানুষ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কর্তৃক পার্বত্য চুক্তির পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুদশক উপলক্ষে চুক্তি সম্পাদনকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান এখনো অর্জিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ সুনিশ্চিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ইত্যাদিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়নি। তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, মাধ্যমিক শিক্ষাসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন করা হয়নি। সেটেলার বাঙালি, অস্থানীয় ব্যক্তি ও কোম্পানী, সেনাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ হয়নি এবং ভূমি বেদখলের ফলে উদ্ভূত পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি বিরোধ এখনো ভূমি কমিশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন কার্যকর করা হয়নি।
ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ র্প্বূক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ সুনিশ্চিত হয়নি এবং সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করা হয়নি।
বুকলেটে আরো বলা হয়, দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে রক্ত-পিচ্ছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্যবাসীর অধিকার সনদ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অর্জিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি ও কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে আবারও জটিলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার যে কোন ষড়যন্ত্র এবং জুম্ম জনগণের এই চুক্তি বাস্তবায়নের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ফ্যাসীবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের যে কোন চক্রান্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কখনোই শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না।
এদিকে, গত ২৯ নভেম্বর ঢাকার সুন্দরবন হোটেলে পার্বত্য চুক্তির দুদশক উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) বলেছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশক পূর্ণ হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বিষয়ই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। অথচ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের মাধ্যমে চুক্তির প্রতিটি ধারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বিগত ৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তিনি আরো বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও অত্যন্ত নাজুক। জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে কঠিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে । বস্তত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলেও তিনি দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করেন।
তবে সরকারী দলীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনুর দাবী পার্বত্য শান্তি চুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, এই চুক্তিটা হলো প্রধানমন্ত্রীর গর্বের সন্তানের মতো। সে সন্তান যেহেতু তিনি জন্ম দিয়েছেন, আমাদের সকলের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত, সেসন্তান লালন-পালন করে তিনিই বড় করে তুলবেন, অন্যকেউ করবে না। তাই আমরা আশাবাদি এই চুক্তি একদিন বাস্তবায়ন হবেই। তিনি দাবী করেন ইতোমধ্যে সরকার পার্বত চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮ ধারা পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকী ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দীপংকর তালুকদারের মতে, আমরা কি কখনো বলেছি যে শতভাগ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি। আমরা বলেছি, সরকারের এই আন্তরিক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে একটি ইতিবাচক মনোভাব যদি না থাকে তাহলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করাটা কঠিন। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে নৈতিবাচক মনোভাবটাই বেশি। নেতিবাচক মনোভাব যদি সবসময় ক্রিয়াশীল থাকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে দরকার স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক অবস্থা। কিন্তু এখানে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের নামে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। অবৈধ অস্ত্রের হাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ জিম্মি হয়ে বসে আছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, চলাচলের স্বাধীনতা নাই, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান থাকে তাহলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করাটা কঠিন। সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করতে হবে। নইলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্র বাধাগ্রস্ত হবে।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, অঙ্ক কষে পার্বত্য চুক্তির কয়টি বিধান বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হয়নি সেভাবে তাকালে বোঝা যাবে না। তবে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। কিছু বিষয় একবোরেই বাস্তবায়িত হয়নি, কিছু আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। তার মধ্যে অভ্যন্তরীন পাহাড়ি উদ¦াস্তুদের পুনর্বাসন একেবারেই হয়নি। এ বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের কাজ হওয়া উচিৎ বাস্তবায়ন করা, অথচ শুধু সরকারকে পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জানি না টাস্কফোর্স কি পরামর্শ দিয়েছেন আর সরকারই বা তা কতটু বাস্তবায়িত করেছে।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ তাদের যে ভূমিকা থাকার কথা, কিন্তু সেভাবে দেখছি না। এছাড়া পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সমন্বিত ভূমিকা রাখতে পারতো আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সাথে। চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার মূল দায়িত্ব হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির, কিন্তু তার অস্তিত্ব ও কার্যকারিতাও দেখা যাচ্ছে না।
পার্বত্য চুক্তিতে এমন বিধান রয়েছে রাষ্ট্রের বা নাগরিকের অথবা পাহাড়ী নন যাদের অধিকার খর্ব করছে বলে এমন অপব্যাখা করা হচ্ছে উল্লেখ করে চাকমা রাজা বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে রাক্ষসীকরণ বা দানবীয়করণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জেনে শুনে ১৯৯৭ সালে চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে। উনি অবশ্যই চোখ বুঝে করেননি। কারণ এখানে আইন মন্ত্রনালয়সহ বিজ্ঞজনরা রয়েছেন। কাজেই সরকার জেনে শুনে দেশের সার্বোভৌমত্ব স্বার্থে, সকল জাতি শ্রেনী লিঙ্গ মানুষের এবং মৌলিক অধিকারকে খর্ব না করেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
পার্বত্য নাগরিক কমিটি সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণে ২০ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী অঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদের যে ক্ষমতা দেয়ার কথা তা হয়নি। জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ার কারণে গণমুখী ও জন প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠছে না। এছাড়া এ অঞ্চলের উপজাতীয় অধূষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতিসহ চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন হয়নি।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও প্রচার বিভাগের সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, যে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষে নিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০ বছরেও পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হতে পারেনি। পার্বত্য চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তির দুই তৃতীয়াংশ ধারাই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের অভাবের কারণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। আজকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পূর্বের মতই আরো জটিল আকার ধারন করছে। পূর্বের চেয়েও আদিবাসী জুম্ম জনগণ অত্যন্ত কঠিন বাস্তবতার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা ভূমি সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষে গত বছর ১ আগস্ট ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই বছরও ৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সংশোধিত বিল আকারে পাস করা হয়। সংশোধিত এ কমিশনের এ পর্ষন্ত ভূমি বিরোধ নিয়ে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে গণ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কোন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এছাড়া পার্বত্য খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের কার্যালয় স্থাপন করা হলেও পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ নেই। তহবিল, জনবল ও পারিসম্পদের অভাবের কারণে এখনো রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় শাখা কার্যালয় স্থাপন করা সম্ভব হয়নি
অপরদিকে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হককে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিলেও গত ৬ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এখনো নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
রাঙামাটিতে কর্মসূচিঃ
পার্বত্য চুক্তির দুদশক বর্ষপূতি উপলক্ষে জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আনন্দ র্যালীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদোগে শহরের জিমনেসিয়াম মাঠে গণ সমাবেশ আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদারসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.