খাগড়াছড়িতে উগ্রসাম্প্রদায়িক হামলার পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামসহ তিনটি সংগঠন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়,“অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হোন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংহতি সুদৃঢ় করুন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শহরের মহাজন পাড়ায় সূর্যশিখা ক্লাবের মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা, বিশিষ্ট মুরুব্বী ও মা’জন পাড়া সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার, বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা যুবতারা চাকমা, জামতলী সমাজ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনুপম চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মিশুক চাকমা। এছাড়া অ্যাডভোকেট সমারি চাকমাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা।
অপরদিকে, মধুপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মধুপুর গ্রামের কার্বারী বিমল চাকমা, ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা। এতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে এল্টন চাকমা। আলোচনা সভা শুরুর আগে সাজেকসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামে সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে সন্ধ্যায় মহাজন পাড়ার সূর্যশিখা ক্লাবের সামনে সড়কে ও মধুপুর-পানখাইয়া পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে দাঁড়িয়ে একযোগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মহাজন পাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য বরুণ চাকমা ও পিসিপির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা। অপরদিকে, মধুুপুর এলাকায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জুপিটার চাকমা, জেলা শাখার নেতা জেসীম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা ও জেলা শাখার নেতা লালন চাকমা। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সহ-সভাপতি অর্না চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য শেষে ১৯৯৬ সালে ৩১ মার্চ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদ ক্যজাই মারমার স্মরণে মধুপুর পানখাইয়া পাড়া স্কুল মোড়ে একত্রিতভাবে সকল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরে পাহাড়িদের উপর উগ্রসাম্প্রদায়িক হামলা স্মরণ করে বলেন, স্থানীয় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের মদদেই সেদিন এই ভয়াবহ হামলা সংঘটিত করা হয়েছিল। এ হামলা বিষয়ে প্রশাসন আগে থেকেই অবগত ছিল। যার কারণে সেদিন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের বাধা না দিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। এ হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা এবং তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া।
বক্তারা আরো বলেন, পাহাড়িদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি করছে তারা নিজের জাতির অস্তিস্তকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প কোন পথ নেই।
বক্তারা খাগড়াছড়ি সাম্প্রদায়িক হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে ভবিষ্যতে এরা আবারো এ ধরনের হামলা ঘটাতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। এজন্য বক্তারা এ হামলার উস্কানিদাতা ও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.