পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরি কমিটির নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জারি করা আদেশ পক্ষপাতমূলক, বর্ণবাদী ও জাতিগত বৈষম্যমুলক উল্লেখ করে অবিলম্বে এ আদেশ বাতিল করা না হলে উচ্চতর আদালতের শরনাপন্ন ও গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার রাঙামাটি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এ ঘোষনা দেন।
সংবাদ সন্মেলনের রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন স্থগিত, তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান তিনটি সরকারী কলেজের অধিক সংক্যক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্সকোর্স চালু, শিক্ষা উন্নয়নে অধিকতর অর্থ বরাদ্দ এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের চার দফা দাবী-দাওয়া তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। বক্তব্যে দেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ ড. মানিক লাল দেওয়ান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ইউকে জেং, জুমলিয়ান পাংখোয়া, প্রফেসর মাংসানু চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য স্নেহ কুমার চাকমা, নারী নেত্রী নমিতা চাকমা, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা। সংবাদ সন্মেলনে এসময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্যজেলা পরিষদের সাবেকচেয়ারম্যান জগৎজ্যোতি চাকমা, প্রফেসর মধুমঙ্গল চাকমা,শিক্ষাবিদ বোধিসত্ব চাকমা, সাবেক সরকারী কর্মকর্তা তারাচরণ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা, সুকুমার দেওয়ানসহ তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসী সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। সংবাদ সন্মেলন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, পার্বত্য বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যেরাষ্ট্রের এক ধরনের অবিশ্বাস-জনিত আতঙ্ক বিরাজ করছে। যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক ও অগণতান্ত্রিক নীতিরই বহি:প্রকাশ। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর সংশোধন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তরেরনতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এধরনের সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজকে অতিশয় ক্ষুব্ধ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা নি:সন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ উল্লেখ করে সংবাদ সন্মেলনে আরও বলা হয়, যাদের জন্য এ জনগুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদসহ স্থায়ী অধিবাসীদের সাথে যথাযথভাবে আলোচনা করা হয়নি এবং তাদের মতামত ও সম্মতিও নেয়া হয়নি। অধিকন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,গত ৭ জানুয়ারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোন দেশী/বিদেশী সংস্থা/ব্যক্তি কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সাথে সাক্ষতের সময় স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী/বিজিবি-এর উপস্থিতি এবং ভ্রমণে ইচ্ছুক বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের এক মাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করার আদেশ জারী করে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.
নিচে সংবাদ সন্মেলনের পাঠ করা বক্তব্যে হুবহুদেয়া গেল—
রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা এবং অতি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোন দেশী/বিদেশী সংস্থা/ব্যক্তি কর্তৃক পাহাড়িদের সাথে সাক্ষতের সময় স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী/বিজিবি-এর উপস্থিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে ইচ্ছুক বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের একমাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করার আদেশ বাতিলের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন--
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার, সকাল ১০:৩০ ঘটিকা, সাবারাং রেস্টুরেন্ট, রাজবাড়ী সড়ক, রাঙ্গামাটি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
আপনারা জানেন যে, বর্তমান সরকার রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এলক্ষে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করেই ২০০১ সালে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকার রাঙ্গামাটিতে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা নি:সন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ বলা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যাদের জন্য উক্ত জনগুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদসহ এতদাঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের সাথে যথাযথভাবে আলোচনা করা হয়নি এবং তাদের মতামত ও সম্মতিও নেয়া হয়নি। অধিকন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতির উপর নানা নেতিবাচক প্রভাব এখনো ক্রিয়াশীল হয়েছে যা পার্বত্য চট্টগ্রামে জনমুখী ও সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।এমনিতর অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ বরাবরই এ সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে এবং তদপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ আপাতত: স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
অত্যন্ত দু:খজনক ও উদ্বেগজনক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের জনগণের বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও সরকার গত ১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে রাঙ্গামাটিতে এক সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উক্ত সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। এমনকি উক্ত সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রশাসনকে প্রথমে ১৪৪ ধারা ও পরে সান্ধ্য আইন জারী করতে হয়েছে। উক্ত উত্তেজনাকর সহিংস পরিস্থিতির স্বাভাবিক হয়ে আসতে না আসতেই অতি সম্প্রতি সরকার বিতর্কিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমনে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাদেয়া দিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ক’ খ-ের ১নং ধারায় বলা হয়েছে যে, “উভয় পক্ষ (সরকার ও জনসংহতি সমিতি) পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করিয়া এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন”। এই বিধান অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম এমনভাবে নিতে হবে যাতে এই অঞ্চলের “উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল”-এর বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে এবং তৎপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পার্বত্যাঞ্চলের অধিবাসীদের স্বতন্ত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটসহপার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থা, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য-মন্ডিত জনমিতি, ভূমি ও পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক যে, রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ বিবেচনা নেয়া হয়েছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ মনে করে না।
অধিকন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে এতদাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোমজবুত অবস্থানে গড়ে উঠতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম দিক ভূমি সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও অধিকাংশ প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীরা এখনো তাদের স্ব স্ব জায়গা-জমিতে যেতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ও উপাদানগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত রেখে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়ে রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের শিক্ষা প্রসারের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকতর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ মনে করে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা জানেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কী ধরনের বেহাল অবস্থায় মধ্যে রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ৭টি সরকারি কলেজের মধ্যে ২০২টি সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদের মধ্যে ৬৪টি পদ খালি রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ১৮টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫৭টি শিক্ষক পদের মধ্যে ১৪৩টি পদ খালি রয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষক ছাড়াই এসব হাই স্কুল-কলেজসমূহ খুড়িয়েখুড়িয়ে চলছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চলছে মাত্র ১১ জন শিক্ষক দিয়ে। ২৫ জন শিক্ষক পদের মধ্যে ১৪টি খালি থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি ইংরেজী বিষয়ে কোন শিক্ষকই নেই এ বিদ্যালয়ে (প্রথম আলো, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থা যদি এমনই হয় তাহলে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। অনেক বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে বিদ্যালয়-গৃহের অভাবে খোলা আকাশে নীচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হয়। তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসমূহে যে কটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স রয়েছে সেগুলোও চলছে শিক্ষক-সংকট, শিক্ষা-উপকরণ ও শ্রেণি-কক্ষের সমস্যার মধ্য দিয়ে। বিদ্যালয়-কলেজগুলোতে রয়েছে অবকাঠামো সংকট, ছাত্র-শিক্ষকদের আবাসন ও শিক্ষা উপকরণের অভাব, পরিচালনাগত নানা সমস্যা। প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা আরো বেশী নাজুক। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক-কলেজ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যয় অবস্থায় রেখেসরকার পার্বত্যবাসীর উপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এবং এতে করেপার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো সংকট বাড়িয়ে দেবে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ মনে করে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপানারা জানেন, গত ৭ জানুয়ারী ২০১৫ তারিখে মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় কোন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি/সংস্থা কর্তৃক পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয়দের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে ইচ্ছুক বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের একমাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করা, তিন পার্বত্য জেলায় কর্মরত পাহাড়ি পুলিশ সদস্যদের অন্য জেলায় বদলি করা ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এসব সিদ্ধান্তাবলী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু দুর্ভাগ্যজনক ও আপমানজনকই নয়, এটি একটি পক্ষাপতদুষ্ট, বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী সিদ্ধান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের সাথে বা কোন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি/গোষ্ঠীর সাথে কোন দেশী কিংবা বিদেশী সংস্থা সাক্ষাৎ করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি এর উপস্থিতির প্রয়োজন হচ্ছে না।অথচ কেবল জাতিগত ভিন্নতার কারণে পাহাড়িদের বেলায় এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সমস্যা ও আইন-শৃঙ্খলা মোকাবেলার জন্য মিশ্র পুলিশ বাহিনী গঠনের কাজ চলছে সেখানে তিন পার্বত্য জেলায় কর্মরত পাহাড়ি পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দু:খজনক ও উদ্বেগজনক।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্ত এটাও প্রমাণ করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মধ্যেএক ধরনের অবিশ্বাস-জনিত আতঙ্ক বিরাজ করছে, যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক ও অগণতান্ত্রিক নীতিরই বহি:প্রকাশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। যে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর সংশোধন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তরেরনতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছেসে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এধরনের সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজকে অতিশয় ক্ষুব্ধ করেছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
উপরোক্ত পরিস্থিতির আলোকে আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ নিম্নোক্ত দাবিনামা তুলে ধরছে-
(১)রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে হবে।
(২)তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান তিনটি সরকারী কলেজে অধিক সংস্যক বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্স চালু, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের জন্য অধিকতর কোটা বরাদ্দ এবং পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষা উন্নয়নে অধিকতর অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
(৩)গত ৭ জানুয়ারি ২০১৫ গৃহীত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল সিদ্ধান্ত বা আদেশ অচিরেই প্রত্যাহার করতে হবে।
(৪)পর্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য এবং ধৈর্য্য ধরে শোনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আপনাদের সকল অশেষ ধন্যবাদ।
গৌতম দেওয়ান
পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের পক্ষে
রাঙ্গামাটি। ফোন: ০১৭৩১০৯১৩৮৮