স্ব:স্ব মাতৃভাষার প্রথমিক শিক্ষা নিশ্চিতসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে ছাত্র সমাবেশ, মাতৃভাষায় প্রতীকী ক্লাশ ও বিক্ষোভ-মিছিল করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি।
শহরের স্বনির্ভর মাঠে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা। বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) নেতা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অলকেশ চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতা জেসীম চাকমা।
ছাত্র সমাবেশে আলোচনা শেষে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় প্রতীকী ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘন্টা বাজিয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ক্লাশ শুরু করা হলে উপস্থিত সবাই আগ্রহের সাথে নিজ মাতৃভাষায় পাঠ নেন। ক্লাশে চাকমা ভাষায় পাঠদান করেন শুভাশীষ চাকমা, মারমা ভাষায় কংজরী মারমা এবং ত্রিপুরা ভাষায় জগদীশ ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। আধা ঘন্টা ক্লাশ চলার পর একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের করা হয়। এর আগে একটি মিছিল স্বনির্ভর মাঠ থেকে চেঙ্গী স্কোয়ারে হয়ে স্বনির্ভর মাঠে গিয়েশেষ হয়। এ এতে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ থেকে ১২ শত ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়।
বক্তারা অবিলম্বে সকল সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করে একুশের ভাষা শহীদদের যথার্থ সম্মান জানানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা দেয়ার পর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্বাসমুহ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছিল। আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সান্তাল, গারো ও মুনিপুরি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সরকার তাদের ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে বরং ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। তাতে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা দূরের কথা, সংবিধানে তাদের স্বতন্ত্র জাতীয় অস্তিত্বের স্বীকৃতি পর্যন্ত প্রদান করেনি।
বক্তারা রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সম্পর্কে বলেন, আমরাও চাই পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক, এটা আমাদের দাবিও। কিন্তু সরকার যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যাগুলো আগে সমাধান না করে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করছে তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রান্তিকীকরণ প্রক্রিয়া আরো জোরদার হবে। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার দাবি জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.