পাহাড় ধসের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন সরকারী পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নেওয়া ৪০ পরিবারের ঠিকানা আজও নিশ্চিত হয়নি। এসব পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক সদস্য বর্তমানে মানবেতর দিন যাপন করছে। কবে নাগাদ তাদের পূর্নবাসিত করা হবে, নাকি আদৌ এদের পূর্নবাসিত করা হবে না। অথবা কখন তাদরে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় , তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
গেল ১৩ জুন টানা বর্ষন ও পাহাড় ধসে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন স্থানে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত পরিবার গুলোকে রাখার জন্য উপজেলায় ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অধিকাংশ পরিবার নিজ নিজ বসতঘরে চলে গেলেও অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত ৪০টি পরিবার কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে যায়। পরবর্তীতে গত ২ জুলাই এসব পরিবারকে স্থায়ীভাবে পূর্ণবাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারী দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি সহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সে সময় বিদ্যালয়ে পরীক্ষার কারনে ওই পরিবার গুলোকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে সরিয়ে কাপ্তাই ১০ শয্যা হাসপাতালের পরিত্যাক্ত ঘর, বনবিভাগের পরিত্যাক্ত ভবন, জাকির হোসেন স’মিলের পিছনের পরিত্যাক্ত ঘর, বিএফআইডিসি ক্লাবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তিন’ মাস হলেও ওই ৪০পরিবারকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে পরিবার গুলো নানা দুশ্চিন্তায় দিন যাপন করছে।
মঙ্গলবার কাপ্তাই বিএফআইডিসি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে বৃদ্ধা মনজু বেগম (৫০) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমরা কোন সাহায্যে চাই না আমরা শুধু একটু মাথা গোঁজার ঠাই চাই’। বৃদ্ধ স্বামী ওসমান গণি (৬০) কে নিয়ে গত ২ মাস ধরে তিনি অস্থায়ী এ আশ্রয় কেন্দ্রে খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বসবাস করছেন। তার মত আরোও ১১টি পরিবার মিলে মোট ১২ পরিবার বিএফআইডিসি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে। মনজু বেগমের মত আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মোহম্মদ নাছির(৫০) সুমি বেগম (২২)বলেন, পাহাড় ধসের পর এক মাস আশ্রয় কেন্দ্রে থাকাকালীন প্রশাসন থেকে খাবার সরবারহ করা হয়েছে। সেখান থেকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পর থেকে কোন খাবার দেওয়া হচ্ছে না ।
তারা আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমাদেরকে মাথা পিছু ৬টি টিন, ২২শ’৪০ টাকা উপজেলা ইউএনও অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনা,নৌ,বিজিবি ও বিভিন্ন এনজিও থেকে কিছু নগদ অর্থ ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ছাড়া আর কোন সাহায্যে আমরা পাইনি। বর্ষার কারনে তেমন কাজকর্ম না থাকায় আয় রোজগারও নেই। তাই আমরা কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। অনেক কষ্টে আমাদের দিন-যাপন করতে হচ্ছে। এত কষ্ট স্বীকার করার পরও পরিবার গুলো কোন সাহায্যে চায় না, শুধু একটু মাথা গোঁজার ঠাই চায়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, পরিবার গুলোকে পূর্ণবাসনের জন্য অনেক লেখালেখির পর উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি । তারা এভাবে কতদিন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সেটা আমার জানা নেই ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারিকুল আলম বলেন, খাস জায়গার অভাবে এদের পূর্ণবাসন সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ দিলদার হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসনের জন্য আশ্বাস দেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই বাসীর প্রাণের দাবী, ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবার গুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্ণবাসন করা হউক। উল্লেখ্য, কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি, ৬৪জন আহত ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.