বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে সংবাদ সন্মেলন

Published: 24 Aug 2017   Thursday   

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটক বাংলা ভাষায় প্রথমবারের মতো পূর্নাঙ্গভাবে গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে এক সংবাদ সন্মেলনে আয়োজন করা হয়।


রাঙামাটি রাজ বনবিহার ধর্মশালায় আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটির প্রধান সম্পাদক শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির। এসময় প্রকাশনা কমিটির সদস্য করুনা বংশ মহাস্থবির, বিধুর মহাস্থবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতিগৌতম দেওয়ান,প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা প্রমুখ।


সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের ভাষায় সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ হলেও বাংলায় অনুবাদ হয়নি। তবে ত্রিপিটক বিক্ষিপ্তভাবে বাংলা অনুবাদ করে হলেও পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেরও আশা ও স্বপ্ন ছিল একদিন বাংলা ভাষায় পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক অনুবাদ করা হবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পালি ভাষায় ৫৯টি গ্রন্থকে এবারই এই প্রথম বাংলা ভাষায় ২৫ খন্ডে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশিত হচ্ছে।


সংবাদ সন্মেলনে আরো বলা হয়, শুক্রবার বাংলা ভাষায় ত্রিপিটকের গ্রন্থের আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করবেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু সংঘের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও চাকমা রাণী ইয়ান ইয়ান।


সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, ত্রিপিটক কেবল বৌদ্ধদের কাছে নিখাট ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি জ্ঞানগর্ভ ও সার্বজনীন বিষয়বস্তুর কারণে সর্বদেশ ও সর্বজনের অনুসন্ধিৎসু মনকে আলোকি,পুলকিত এবং বিমুগ্ধ করে। তাইতো ত্রিপিটক বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্সফোর্ড ভিত্তিক সংস্থা লল্ডন পালি টেক্স সোসাইটি কর্তৃক ত্রিপিটকের ইংরেজি ও পালি সংস্করণ প্রকাশিত থাকে,যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীতে এই সংস্করণকে ভিত্তি করে জার্মান,ফ্রান্স,রুশ ইত্যাদি ভাষায় ত্রিপিটক গ্রন্থগুলো অনুদিত হয়।


সংবাদ সন্মেলনে ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে আরো বলা হয়, বাংলায় ত্রিপিটক অনুবাদের ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের। ১৮৮৭ সালে প্রথম পালি থেকে বাংলায় অনুবাদ হয় সুত্তনিপাত গ্রন্থটি। এটি অনুবাদ করেন ধর্মরাজ বড়–য়া। এরপর ১৯১৬ সালে ঈশান চন্দ্র ঘোষ জাতক ৬ খন্ড বাংলায় অনুবাদ করেন। ১৯২৮ সালে প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ করার এক মহৎ গ্রহনের জন্য মায়ানমারে রেঙ্গুনে বৌদ্ধ মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। তার এ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে শক্তিশালী বোমার আঘাতে বৌদ্ধ মিশন প্রেস সম্পুর্ণরুপে ধ্বংস হয়। সেখানেই এ উদ্যোগ পরিসমাপ্তি ঘটে।


সংবাদ সন্মেলনে ত্রিপিটক প্রকাশের সন্মিলিত প্রচেষ্টা সময়োপযোগী ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে এই প্রথম বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশ করে একদিকে পরম পূজ্য বনভান্তের সেই মহান ইচ্ছা পরিকল্পনাকে পূরণ করে দিতে সমর্থ হয়েছে অন্যদিকে এখনো বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ হয়নি এরকম লজ্জাজনক উক্তি চিরতরে মুছে দিয়ে এক অভাবনীয় গৌরবোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি বাংল সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করবে।


উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান গৌতম বুদ্ধ আরহৎ লাভের পর মানবমুক্তির জন্য ধর্ম প্রচার করেছিলেন। সেই সাধনালব্ধ অর্জিত জ্ঞান দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি জীব জগতে হিত-সুখ কামনায় প্রচার করেছিলেন তারই সমন্বিত রুপ হলো ত্রিপিটক। এ ত্রিপিটক থাইল্যান্ড, ভারত, বার্মা, চীন, জাপান, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের ভাষায় সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ হলেও বাংলায় অনুবাদ হয়নি নানা দেশে বহু ভাষায় পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশিত হলেও বাংলা ভাষায় আজো ত্রিপিটক প্রকাশিত হয়নি। তবে ত্রিপিটক বিক্ষিপ্তভাবে বাংলা অনুবাদ হয়।
--হিলিিড২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত