আগামী ২৫ আগষ্ট রাঙামাটিতে বাংলায় প্রথম পূর্নাঙ্গভাবে ত্রিপিটক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে

Published: 19 Aug 2017   Saturday   

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটক বাংলা ভাষায় এই প্রথম পূর্নাঙ্গভাবে গ্রন্থ মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। আগামী ২৫ আগষ্ট রাঙামাটির রাজ বন বিহারে আনুষ্ঠানিভাবে ত্রিপিটক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। ইতোমধ্যে ত্রিপিটক গ্রন্থের ছাপানো কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

 

জানা যায়,আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান গৌতম বুদ্ধ আরহৎ লাভের পর মানবমুক্তির জন্য ধর্ম প্রচার করেছিলেন।  সেই সাধনালব্ধ অর্জিত জ্ঞান  দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি  জীব জগতে হিত-সুখ কামনায় প্রচার করেছিলেন তারই সমন্বিত রুপ হলো ত্রিপিটক। এ ত্রিপিটক থাইল্যান্ড, ভারত, বার্মা, চীন, জাপান, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের ভাষায় সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ হলেও বাংলায় অনুবাদ হয়নি নানা দেশে বহু ভাষায় পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশিত হলেও বাংলা ভাষায় আজো  ত্রিপিটক প্রকাশিত হয়নি।  তবে ত্রিপিটক বিক্ষিপ্তভাবে বাংলানুবাদ হয়।

 

সূত্র মতে,দেশের বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির রাজ বন বিহারের প্রধান ও মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত  আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেরও আশা ও স্বপ্ন ছিল একদিন বাংলা ভাষায় পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক অনুবাদ করা হবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে তারই শিষ্যরা ২০১৫ সালে নয় সদস্য বিশিষ্ট ‘বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটি’ গঠন করেন। এ কমিটি দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ত্রিপিটকের পালি ভাষায় রচিত ৫৯টি গ্রন্থকে ২৫ খন্ডে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে অবশেষে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাংলায় পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ আগষ্ট রাঙামাটির রাজ বন বিহারে জাকজমকভাবে এই ত্রিপিটকের আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন  হতে যাচ্ছে।  অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের বৌদ্ধ পন্ডিরা ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে রাঙামাট রাজবন বিহারের নিজস্ব ছাপাখানায় বাংলা ভাষায় পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক গ্রন্থ ছাপানোর কাছ শেষ হয়েছে। বাকী আছে শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

 

এদিকে  বাংলা ভাষায় এই প্রথম  পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক প্রকাশের জন্য বৌদ্ধ সমাজ স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়ে  বলেছেন বাংলায় পুর্ণাঙ্গ ত্রিপিটক প্রকাশনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যতে রচিত হতে যাচ্ছে নতুন এক ইতিহাস। তাছাড়া পালি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এই প্রথম ত্রিপিটক প্রকাশের ফলে বাংলা ভাষাাষীদের গৌতম বুদ্ধের জীবন দর্শন ও শান্তির বাণী মনে প্রাণে ধারন করে উপলদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ধারনা।

 

বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটির প্রধান সম্পাদক শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত ভিক্ষু জানান, দশ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছেন রাজ বন বিহারের ভিক্ষু শ্রমণ ও ছাপাখানার শ্রমকিরা। আন্তর্জাতিক  খ্যাতি সম্পন্ন ধর্মগুরু  সাধনা নন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে)’র স্বপ্ন ছিল ত্রিপিটকের সকল খন্ড বাংলায় প্রকাশ করা। এ প্রকাশনার মাধ্যমে ভান্তের স্বপ্ন পুরণ হওয়ায় খুশি তার শিষ্যরা। ইতোমধ্যে দশ হাজার ত্রিপিটক সেট ছাপানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

 

 তিনি আরো জানান, ত্রিপিটকের সবগুলো খন্ড রাজবন বিহার থেকে সংগ্রহ করা যাবে। দাম পড়বে ২০ হাজার টাকা। অনুশীলনের জন্য বাংলা একাডেমী, ঢাকা, চট্টগ্রাম,জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ে এক সেট করে ত্রিপিটক দেওয়া হবে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রানলয় সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান  বাংলা ভাষায় পূর্নাঙ্গ ত্রিপিটক গ্রন্থ প্রকাশের বুদ্ধ জাতি আনন্দিত উল্লেখ করে বলেন, বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্বে যে দর্শন দিয়েছেন তা আমাদের পরিস্কার নয়। তাই বাংলা ভাষায় ত্রিপিটক প্রকাশের প্রেক্ষিতে সত্য ধর্ম ও বিজ্ঞান সম্মত ধর্মকে পড়াশুনা করে জানতে পারবো। সে জন্য এ বুদ্ধ দর্শনটা শুধু বুদ্ধ ধর্মালম্বীদের নয় যে কোন ধর্মের লোকজন এ সত্য ধর্মকে জানতে পারে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

 

পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি ও রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পরম পূজ্য বনভান্তে ইচ্ছা ছিল বাংলা ভাষায় ত্রিপিটক অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়। তারই ইচ্ছা অনুসারে তার শিষ্যমন্ডরীরা ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটি গঠন করে বাংলাদেশে এই প্রথম ২৫ খন্ডে সমগ্র ত্রিপিট প্রকাশ করতে যাচ্ছে। তবে ত্রিপিটকের বিভিন্ন অংশ বাংলায় আনুবাদ করা হলেও পুর্নাঙ্গ নেই। তাই একজন বুদ্ধ হিসেবে পূর্নাঙ্গ ত্রিপিট প্রকাশে গর্বিত এবং যুগান্তকারী ঘটনা।   

 

রাঙামাটি রাজ বন বিহারের বনভান্তের শিষ্য সংঘের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ  প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বলেন, পরম পূজ্য বন ভান্তের একটা স্বপ্ন ছিল সমগ্র ত্রিপিটক বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা। দেরীতে হলেও সেই স্বপ্ন বাস্তব রুপদান করতে যাচ্ছে। বাংলা ভাষায় ত্রিপিটক পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশের মাধ্যমে  ভগবান বুদ্ধের সৎধর্মকে পুরিপূর্নভাবে জানতে ও শিখতে পারবো। তাই প্রত্যেক মুক্তিকামী মানবেরই উচিত ত্রিপিটক শাস্ত্র অধ্যায়ন করা।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর. 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত