ঢাকায় ইউপিআর ও আদিবাসীদের অধিকার শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Published: 16 Jul 2017   Sunday   

রোববার রাজধানী ঢাকায় ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) ও বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

দি ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন। এসময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর বাঞ্চিতা চাকমা, সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন; সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; ব্লাস্টের এডভাইজার এডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ালিশনের সদস্য সংগঠন আদিবাসী ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট ফোরাম এর সভাপতি অজয় এ মৃ। আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউপিআর কোয়ালিশনের অন্যতম সদস্য সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বাবলু চাকমা।


এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, থোওায়ং মারমা; ইউজিন নকরেক, এন্ড্রু সলোমার, নমিতা চাকমা, সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, মাহবুবুল হক, পার্থ শংকর সাহা, সোহেল হাজং, হরেন্দ্রনাথ সিং প্রমুখ।


আলোচনায় প্রফেসর বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, আদিবাসী শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক মাতৃভাষার বই এই বছরে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এই বইগুলো পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল তা করা হয়নি। ফলে এই উদ্যোগের ফলাফল নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।


সম্প্রতি লংগদুতে আদিবাসীদের ঘর-বাড়িতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যা খুবই ভয়াবহ অবস্থা। এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন। আগামীতে আদিবাসীসহ দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।


সঞ্জীব দ্রং বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ইউপিআরের চক্রে ৩৯ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়। এসময় সরকারের প্রতিনিধিরা পার্বত্য চুক্তির ৪৮টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলেন। আসলে কি তাই? এটা বুঝতে আমাদের বাকি নেই যে তারা চালাকি করে উত্তর দেয়। তারা আমাদের বোকা মনে করে। কারণ তাদের হাতে ক্ষমতা। তবে অতি চালাকের বিপদ আসন্ন।


তিনি আরো বলেন, যেকোন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিচার্য হবে সেখানকার সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তার উপর। নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা ভালো নেই। তবে আমাদের হাল ছাড়লে হবেনা। অনবরত কথা বলে যেতে হবে, দাবি জানাতে হবে।


সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, রাষ্ট্র শুধু আদিবাসী নয় এদেশের সাধারণ গরীব মানুষদের প্রতি যে অন্যায়গুলো করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বললেও সরকার কর্ণপাত করছেনা। সমতলের আদিবাসীদের ভূমির রক্ষাকবচ হিসেবে প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা কোন কাজে আসছেনা। আদিবাসীরা নিরবে দেশান্তরিত হচ্ছে। এটা সরকারের জন্যও নিশ্চয় লজ্জার হবে। আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইউপিআরের মতো যেসব ব্যবস্থাগুলো আছে সেগুলোতে অনবরত আদিবাসীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ দেশীয় পরিসরে বড় ধরনের লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।


আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে বাবলু চাকমা বলেন, আগামী বছরের মে মাসে ইউপিআরে বাংলাদেশের তৃতীয় চক্রের রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। এই চক্রে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা শুধু মানবাধিকার উন্নীতকরণের অঙ্গীকার শুনতে চাই না। চাই অঙ্গীকারগুলোর বাস্তবায়ন।

 

এছাড়াও আলোচনায় তিনি বেশকিছু সুপারিশ দেন। সেগুলো হল সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষনা পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করা, আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষর করা, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি সুরক্ষায় স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা ও পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা, আদিবাসী নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা ও সহিংসতার শিকার নারী-শিশুদের আইনী সহায়তা প্রদান করা, আদিবাসী নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ও আদিবাসীদের সুরক্ষায় আদিবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত